সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে ‘রানার মিডিয়া’র আয়োজনে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় একথা জানান এই সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক; যার বক্তব্যের মধ্য নিয়ে ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত।
খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি ব্যস্ত থাকায় আমাদের সময় দিতে পারেননি।
“প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তো আর হুট করে কথা বলা যায় না, প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে যারা আমাদের সমন্বয় করেন, তারা আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা আশা করি, আমরা সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কথা বলতে পারব।”
মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের প্রকাশ্য বিরোধিতা মামুনুলই প্রথম করেন। তারপর হেফাজতের অন্য নেতারাও সরব হন।
মামুনুলসহ হেফাজত নেতাদের এই অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা যেমন কড়া ভাষায় কথা বলছেন, বিপরীতে তাদের আলোচনার মাধ্যমে বোঝানোর কথা বলেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাস্কর্যবিরোধীদের রুখে দাঁড়ানোর এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়ায় হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে।
মামুনুল পাল্টা অভিযোগ, তাদের ভাস্কর্য বিরোধিতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামটি জুড়ে দিয়ে জাতির পিতাকে আলেম-ওলামাদের বিপক্ষে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, “উনারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজটা করছেন খুব ভালো করে বুঝে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার এই জায়গাটাকে স্পষ্ট করেছি। জাতীয় নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যতটুকু শ্রদ্ধা তার সবটুকু শ্রদ্ধা আমাদের আছে।
“এখানে কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ না, প্রসঙ্গটা ভাস্কর্যের। আমরা স্পষ্টভাবেই বলছি, ভাস্কর্যটা জিয়াউর রহমানের হোক, আমার বাবার নামে তৈরি করা হয়, এমনকি আমাদের রসূলের নামে তৈরি করা হয়, সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।”
ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলার যে হুমকি হেফাজত আমির বাবুনগরী দিয়েছেন, তাকে সমর্থন করে মামুনুল বলেন, “টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলা, এটা তো প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষা করা আমাদের ভাষা। একটা রাজনৈতিক ভাষা। তার কাছ থেকে শিখে হয়ত আমাদের দায়িত্বশীলরা একই ভাষা প্রয়োগ করছে।”
বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে সরকারকে দোষারোপ করে বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে হেফাজত নেতা মামুনুল তারও জবাব দেন।
“বর্তমান সময়ে আমার কি দায়িত্ব, সে দায়িত্ববোধ থেকে যখন আমি কথা বলি, তো সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমাকে সরকারকে অ্যাড্রেস করতে হয়। সরকার আমার অভিভাবক, রাষ্ট্রের অভিভাবক, সুতরাং আমার যত কথা, যত দাবি, যত অনুভূতির কথা, আমি সরকারকে বলব না তো কাকে বলব? আমার ক্ষোভের কথা, প্রতিবাদের কথা, সব কথা আমি সরকারকেই বলব।”
ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে সরব শাহরিয়ার কবিরের সমালোচনা করে মামুনুল বলেন, “উনি যে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, অথচ মুক্তিযোদ্ধা সেজে গোটা জাতির সাথে প্রতারণা করেন। কাদের সিদ্দিকীই তো সেটা বলেছেন।”
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সমালোচনা করতে গিয়ে হেফাজত নেতা বিবর্তনবাদ পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিতে বলেন।
“জাফর ইকবাল ডারউইনের মতবাদকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। যারা এ মতবাদকে বিশ্বাস করবে, তারাই তো নাস্তিক।”
সাংবাদিক আ স ম মাসুমের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় যুক্ত থাকা আইনজীবী নিঝুম মজুমদার তখন হেফাজত নেতাকে বলেন, ইসলামী শরীয়াহ আইন মোতাবেকও কাউকে নাস্তিক ঘোষণা করতে পারেন না হেফাজতের নেতারা।
তার এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মামুনুল।
পরে সঞ্চালক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কের আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কথা তুললে আলোচনা ছেড়ে যান খেলাফত মজলিসের এই নেতা।