মধু দা’র ভাস্কর্যের ভাঙা অংশ পড়ে ছিল পাশেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে ‘মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্য’র একটি অংশ ভাঙার পর সেটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2020, 09:41 AM
Updated : 3 Dec 2020, 09:41 AM

বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নজর আসার পর ভাস্কর্যটি সংস্কার করা হয়।তবে ভাস্কর্যটি কিভাবে ভেঙেছে, তা উদঘাটন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শহীদ মধুসুদন দে’র ছেলে ও ক্যান্টিনের পরিচালক অরুণ কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় যখন ক্যান্টিনে যাই, তখন দেখি ভাস্কর্যটার একটা কান ভাঙ্গা। পরে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, উপাচার্য ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। পরে প্রক্টরিয়াল টিম এসে ঠিক করেছে।”

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, “ভাস্কর্যের একটি কান ভাঙা এমন তথ্য গতকাল রাতে আমার কাছে আসে। পরে প্রক্টরিয়াল টিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। ভাস্কর্যের পাশে ভাঙা কানটি পড়েছিল। ক্যানটিনের কর্মচারীরাই সেটি প্রতিস্থাপন করেছেন।

“তবে ভাস্কর্যে আঘাতটি খেয়ালের বশে হয়েছে, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা জানা যায়নি। কারা, কী উদ্দেশ্যে কাজটি করেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তা খুঁজে বের করতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।”

বাংলাদেশের অনেক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে আছে এই ক্যানটিনের নাম। আর এই ক্যান্টিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবার প্রিয় মধুসূদন দে, যিনি মধুদা নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুরের শ্রীনগরের জমিদারদের সাথে নকরীচন্দ্রের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে নকরীচন্দ্র তার দুই পুত্র আদিত্যচন্দ্র ও নিবারণ চন্দ্রকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। তারা জমিদার বাবুর জিন্দাবাজার লেনের বাসায় আশ্রয় নেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নকরী চন্দ্র পুত্র আদিত্য চন্দ্রের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যবসা প্রসারের দায়িত্ব দেন।

নকরীচন্দ্রের মৃত্যুর পর আদিত্য চন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের মাধ্যমে তার ব্যবসা শুরু করেন। ব্রিটিশ পুলিশ এ সময় ক্যাম্পাসের আশপাশের ব্যারাক ও ক্যাম্প প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নিলে আদিত্য চন্দ্র ব্রিটিশ পুলিশের কাছ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে দুটি ছনের ঘর কিনে তার একটিতে বসবাস শুরু করেন।

১৯৩৪-৩৫ সাল থেকে আদিত্য চন্দ্রের ছেলে মধুসুদন দে বাবার সঙ্গে খাবারের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে পক্ষাঘাতে বাবার মৃত্যুর পর মধুদা পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে ডাকসু কার্যক্রম শুরু হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পাশে মধুদার দায়িত্বে ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ সালে মধুর ক্যান্টিন পাক বাহিনীর রোষানলে পড়ে। এরই সূত্র ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন মধুদা, তার স্ত্রী, বড় ছেলে ও তার নববিবাহিত স্ত্রী। মধুদার স্মরণে মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গনেই নির্মিত হয় তার স্মৃতি ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির গায়ে লেখা রয়েছে ‘আমাদের প্রিয় মধুদা’ । এর ভাস্কর হলেন মো. তৌফিক হোসেন খান।

১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন উপাচার্য এমাজ উদ্দীন আহমেদ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। তবে পরবর্তীতে এটি পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং ২০০১ সালের ১৭ মার্চ পুনঃনির্মিত ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন উপাচার্য এ. কে আজাদ চৌধুরী।

শুরুতে এটি মধুর স্টল, মধুর টি-স্টল, মধুর রেস্তোরা ইত্যাদি নামেও পরিচিত থাকলেও বাংলা ১৩৭৯ সালের ২০ বৈশাখ ডাকসুর উদ্যোগে এর নামকরণ করা হয় ‘মধুর রেস্তোরা’।