রেলের প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে অসন্তোষ সংসদীয় কমিটির

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলন, বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয়ের হিসাবের মধ্যে তারতম্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 10:22 AM
Updated : 2 Dec 2020, 10:25 AM

বুধবার সংসদ ভবনে সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে রেলের গত ও চলতি অর্থবছরের প্রকল্প এবং আগের বৈঠকের সুপারিশের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের নথি থেকে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকট ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের জুলাই মাসে। ২০১৬ সালের জুন মাসে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পরে এটি বাড়িয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ টাকা করা হয়েছে।   

২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়, যা ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যা পরে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ধরা হয়।

এরকম আরও বেশকিছু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি।

পরে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পের যে প্রাক্কলন করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নের সময় ঠিক থাকে না। প্রাক্কলনে যে ব্যয় ধরা হয় দরপত্রে সেটার চেয়ে কম বা বেশি দেখা যায়। এটা হওয়া উচিত নয়।

“তাছাড়া প্রকল্প শুরু হয় মেয়াদ শুরুর অনেক পরে। দেখা যায় ২০১০ সালের প্রকল্প শুরুই হয়েছে ২০১৮ সালে। এর ফলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে যায়; জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ জন্য আমরা বলেছি প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি খরচ করা যাবে না; প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।”

বিষয়টি নজরদারির জন্য সংসদীয় কমিটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ (আইএমইডি) বিভাগের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে বলে তিনি জানান।

এদিকে বৈঠকে ঢাকা থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনায় আন্ডার পাসগুলোতে ‘হাই কিউব কন্টেইনার’ পরিবহণের সুবিধা কেন রাখা হয় নি সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কমিটিতে ব্যাখ্যা দিরেত বলা হয়।

কমিটির সভাপতি বলেন, “জুরাইন রেলওয়ে ওভারপাসের উচ্চতা কম হয়েছে। ওই ওভারপাসের যে উচ্চতা তাতে হাই-কিউব কন্টেইনারগুলো পরিবহন করা যাবে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। সমন্বয়হীনতার কারণে এরকম হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়। এজন্য আমরা ওই বিষয়টি দেখতে বলেছি। আর ভবিষ্যতে যেসব ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ হবে তার উচ্চতা বা গভীরতা ঠিক রাখতে বলেছি।”

এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রেললাইন, সিট, সিগনাল ব্যবস্থা এবং প্লাটফর্মসহ রেলওয়েতে যাত্রীসেবার উন্নয়নের একটি সার্বিক প্রতিবেদন কমিটির কাছে জমা দিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন এবং খরচ হ্রাস করতে, একটি বড় প্রকল্পকে পৃথক করে জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটকে একটি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজগুলোর জন্য আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এছড়া সড়ক পথে রেল সিগনালের স্থানগুলোতে ওভারপাস তৈরি করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, এ বি তাজুল ইসলাম, ফজলে হোসেন বাদশা, আহসান আদেলুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং খাদিজাতুল আনোয়ার বৈঠকে অংশ নেন।