পি কে হালদারকে প্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি না হওয়ায় হাই কোর্টের উষ্মা

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের জন্য আড়াই মাসেও পরোয়ানা জারি না হওয়ায় উষ্মা করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 10:02 AM
Updated : 2 Dec 2020, 03:56 PM

বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পদক্ষেপের হালনাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বিচারপতি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “খুবই আনফরচুনেট! আড়াই মাস হয়ে গেল ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের একটা অর্ডার হল না।”

তখন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, “আমি যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি।”

তখন বিচারক তাকে বলেন, “আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন্ড।”

প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)

এর আগে বেঞ্চে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে আদালতের কাছে পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত ৯ ডিসেম্বর দিন রেখেছে বলে দুদকের আইনজীবী জানান।

খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, তার আগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ দাখিল করতে বলেছে উচ্চ আদালত।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলে ইন্টারপোল কিছু তথ্য চেয়েছে, যার মধ্যে আদালতের পরোয়ানা অন্যতম।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

পরোয়ানা জারি হলে পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইন্টারপোলকে ফের অনুরোধ করা হবে।

এছাড়াও পিকে হালদার সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৮ ব্যাংক হিসাব ও ১৭টি কোম্পানির শেয়ার হিসাব জব্দ করার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

১৯ নভেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাই কোর্ট পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বা গ্রেপ্তার করতে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ১০ দিনের মধ্যে তা জানাতে বলেছিল।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।

বিদেশে থাকা পিকে হালদার গত ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তার দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।

পরে তার জন্য আদালতের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে আইএলএফএসএল। আদালত পিকে হালদার কখন, কবে, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান তা জানাতে বলে।

এরপর আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে আবেদন করে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন।

২১ অক্টোবর হাই কোর্ট পি কে হালদার দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে ‘নিরাপদে’ উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করার আদেশ দেয়।

কিন্তু ২৪ অক্টোবর আইএলএফএসএল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও দুদককে জানায়, অসুস্থতার কারণে পি কে হালদার আপাতত দেশে ফিরছেন না।

পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ২১ জানুয়ারি পি কে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়।

তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ওই নির্দেশ দেওয়া হলেও পি কে হালদার ততদিনে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

আরও পড়ুন