গ্লোবের কোভিড-১৯ টিকার নাম হচ্ছে ‘বঙ্গভ্যাক্স’

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক যে তৈরি করছে, তার নাম বদলে যাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2020, 04:55 PM
Updated : 1 Dec 2020, 04:55 PM

আগে তারা এর নাম ‘ব্যানকোভিড’ রেখেছিল। সেই নাম বদলে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান ‘বঙ্গভ্যাক্স’ রাখার প্রস্তাব দিলে তা মেনে নেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ।

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি নতুন করোনাভাইরাসের টিকা এখনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যায়নি।

টিকার অগ্রগতির খবর জানতে মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে গ্লোব বায়োটেকের অফিসে গিয়ে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন স্বাস্থ্যসেবা সচিব মান্নান।

গ্লোবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যানকোভিড নাম শুনতে কেমন যেন ব্যান ব্যান মনে হয়।

“জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছি। দেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গটা আপনাদের নামে থাক। এজন্য নামটা পরিবর্তন করে বঙ্গভ্যাক্স রাখার প্রস্তাব করেছি। এটি সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়ার মতো। এতে জাতির জনকের বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং ভ্যাকসিন- এই তিনটিকেই প্রতিনিধিত্ব করে।”

তখন টিকার নাম ‘বঙ্গভ্যাক্স’ই রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গ্লোব চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, “আমি যখন এই টিকার ঘোষণা দিই, তখনই বলেছি এটা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করছি।”

পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।

তারা গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানি টিকা তৈরিতে নেমেছে, সেই দৌড়ে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক।

সারা বিশ্বে যেসব টিকা তৈরির কাজ হচ্ছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে এমন ৪২টি টিকার একটি তালিকা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগের অবস্থায় (প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) থাকা ১৫৬টি টিকার আরেকটি তালিকা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ওই তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের টিকার নাম রয়েছে।

মান্নান বলেন, সরকার দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজে লাগাতে চায়। সেজন্য টিকা তৈরির কাজ এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে চায় সরকার। সে কারণেই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে এসেছেন তারা।

তিনি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ যে টিকা পাবে, তাতে দেশের সব মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে দেশীয় উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের বিষয়টিও মাথায় রাখছে সরকার।

“আমাদের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। এ কারণে বিদেশ থেকে সব টিকা এনে পারব না। একটা সময় দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে। এক্ষেত্রে তারা যদি এগিয়ে আসে সে বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে। যদি ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় সেক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের নামও উজ্জ্বল হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, গ্লোব বায়োটেকের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজ এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, যে কোনো টিকার পরীক্ষামূলক শুরু প্রটোকল মেনে করতে হয়।

“গ্লোব বায়োটেক এই টিকার অ্যানিমেল ট্রায়াল করেছেন। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রায়ালের জন্য প্রতিটি পর্যায়েই আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। যদি এটার সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে প্রতিটি পর্যায়ে যত দ্রুত সম্ভব আমরা সহায়তা করব।”

তিনি একই সঙ্গে বলেন, “তবে সেইফটি, অ্যাফিক্যাসি এবং কোয়ালিটির সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। এটি আমরা স্ট্রিকলি মেনে চলব। এজন্য কত সময় লাগবে বলা যাবে না। তবে এক থেকে দেড় বছর লাগবে।”

গত ৩ জুলাই তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টার ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে ১০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তাদের ওই সম্ভাব্য টিকা ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে।

উদ্ভাবিত সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য শিগগিরই তারা বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) আবেদন করবে বলেও জানায় গ্লোব বায়োটেক।

এদিকে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য দেড় মাস আগে আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করেছিল গ্লোব বায়োটেক, তা বাতিল হয়ে গেছে।

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবারই বলেন, আইসিডিডিআর,বির অনাগ্রহ দেখে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।