নবম ওয়েজ বোর্ড: সাংবাদিকদের আয়কর ও গ্রাচুইটি নিয়ে হাই কোর্টের রুল

সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2020, 10:54 AM
Updated : 25 Nov 2020, 10:54 AM

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুল জারি করেছে।

মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে সংযুক্ত সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত বিধান কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ হিসেবে গ্রহণ করে জারি নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে,

>> সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসিনক কর্মচারীগণ কর্তৃক তাদের নিজ নিজ আয় হতে প্রদান করতে হবে।

>> সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রপ্য হবেন।

গত রোববার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামান এই দুটি বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাকায় রিট আবেদন করেন।

  আবেদনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মচারীদের বেতনের উপর আয়কর পরিশোধ করতে হবে।

সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষক আয়কর পরিশোধ করতে দায়বদ্ধ এবং বাধ্য।

কিন্তু নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে আয়কর চাপানো হয়েছে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের ওপর। 

এছাড়া নবম মজুরি বোর্ডে সপ্তম অধ্যায়ে দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রিরিষদ একটি মূল বেতনের সমান অনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশটিও নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে গ্রহণ করা হয়েছে, যা স্ববিরোধী বা সাংঘর্ষিক।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৪৯ (২) ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের বিদ্যমান কোনো সুযোগ কেটে নেওয়ার সুযোগ নেই।

“যেহেতু দুই মাসের মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর ছিল এবং নবম মজুরি বোর্ডের সপ্তম অধ্যায়ে বিষয়টি আইনসিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু একটি মূল বেতনের আনুতোষিক দিতে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ বেআইনি। এই যুক্তি আমরা তুলে ধরলে আদালত আয়কর ও আনুতোষিকের বিষয়ে রুল জারি করেছেন।”

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।

দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়।

পরে বিচারপতি নিজামুল হক ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।

তার ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করে সরকার।