নাশকতার পরিকল্পনায় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য সিঙ্গাপুরে এ মাসের শুরুর দিকে একজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2020, 02:53 PM
Updated : 24 Nov 2020, 02:53 PM

মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আহমেদ ফয়সাল (২৬) নামের ওই যুবককে গত ২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, তিনি ধর্মীয় চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটাতে চেয়েছিলেন।

ইউরোপে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরে সন্দেহভাজন ৩৭ জনের ওপর তদন্ত চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ফয়সাল বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা এবং কাশ্মিরে গিয়ে লড়াই করার পরিকল্পনা করছিলেন।

নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যান ফয়সাল। আইএসের অনলাইন প্রচারণায় প্ররোচিত হয়ে পরের বছরই চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি।

ফয়সাল ভুয়া নামে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সহিংসতায় উসকানিমূলক জিনিসপত্র শেয়ার করতে থাকেন। সহিংসতার জন্য ভাঁজ করে রাখা যায় এমন সব ছোরাও সংগ্রহ করেন তিনি। সিঙ্গাপুরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেশে ফিরে এসব ছোরা দিয়ে সহিংস হামলার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন তিনি।

তদন্তে ফয়সালের সিঙ্গাপুরে সহিংস কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনার প্রমাণ না পাওয়ার ইঙ্গিত মেলার কথা জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী কে শানমুগাম বলেছেন, ফয়সাল এসব ছোরা বাংলাদেশে নিয়ে হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করতে চেয়েছিলেন।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের এই তদন্তের পর আরও ১৫ বাংলাদেশি এবং একজন মালয়েশিয়াকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর তথ্যও এই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী। ফ্রান্সবিরোধী মনোভাব এবং সম্প্রদায়িক সংঘাত ও সন্ত্রাসে উসকানিমূলক মন্তব্য করায় তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।

তবে গত মাসে ফ্রান্সে সংঘটিত ওই সব হামলায় ফয়সালের সম্পৃক্ত না থাকার কথা জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফ্রান্সের প্যারিসে একজন স্কুল শিক্ষকের শিরশ্ছেদের পর নিস শহরে তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের একজনেরও শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।

মন্ত্রণালয় বলেছে, ফয়সাল সিরিয়ায় আইএসের খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং সেদেশে গিয়ে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেলে ‘শহীদ’ হয়ে যাবেন।

গত বছরের মাঝামাঝিতে তিনি সিরিয়ায় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় লড়াইরত আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রতি অনুগত হন।

“সিরিয়ায় এইচটিএসের কাজে লাগবে চিন্তা করে তিনি সিরিয়াভিত্তিক একটি সংস্থায় অনুদান পাঠান,” বলা হয়েছে স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আল-কায়েদা এবং সোমালিয়াভিত্তিক আল-শাবাবসহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ফয়সাল।

তিনি মনে করতেন, বিভিন্ন জায়গায় নিপীড়নের শিকার স্বধর্মের লোকদের জন্য মুসলমানদের সশস্ত্র জিহাদে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।

ইসলামের কথিত শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সিরিয়া ছাড়াও কাশ্মিরে যেতে চেয়েছিলেন ফয়সাল। অনলাইনে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর ভিডিও দেখে এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।