প্রাথমিক অনুসন্ধানে মনিরের নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের এক কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক মাস এই অনুসন্ধান চলছে। শিগগিরই তার কাছে সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিস পাঠানো হবে।”
কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, মনিরের নামে নানা অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। এর মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
ঢাকার মেরুল বাড্ডার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার কারণে তাকে সবাই ‘গোল্ডেন মনির’ নামে চেনে।
মনির অবৈধভাবে এক কোটি ৬১ লাখ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে সেগুলো তার মা ও স্ত্রীর নামে দিয়েছেন- আট বছর আগে এমন অভিযোগে একটি মামলাও করেছিল দুদক। সেই মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
র্যাবের ভাষ্যে, সোনা চোরাচালান দিয়ে সম্পদ গড়া শুরু করলেও পরে জমির ব্যবসায় জড়িয়ে ‘মাফিয়া’ হয়ে উঠেছিলেন মনির।
র্যাব বলছে, মনিরের ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার উপর সম্পদ রয়েছে। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা ও নিকুঞ্জে দুইশর বেশি প্লট রয়েছে তার।
অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, মনিরের নামে তিন কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছেন তারা। এছাড়া র্যাবের অভিযানে জব্দ করা টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণলংকার ও গাড়িসহ ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ২৭ হাজার টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযানে মনিরের বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, চার লিটার মদ, ৮ কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এসব সম্পদের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে দুদক কর্মকর্তা বলেন, "মনিরের কাছে তার এসব সম্পদের হিসেব চাওয়া হবে।"
মনির ২০০৯ সালের পরবর্তী সময়ে এসব সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে দুদক কর্মকর্তাদের অনুমান।
অন্যদিকে মনিরের স্ত্রী রওশন আক্তারের নামে তিন কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৯৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান।
তিনি বলেন, “তিনি একজন গৃহিনী। তার এসব সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তিনি ২০১৬ সালের পরে এসব সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এই অনুসন্ধান করছে।
২০১২ সালের এপ্রিলে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে এক কোটি ৬১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
এই মামলা তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব সম্পদ স্ত্রী ও মায়ের নামে রেখেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ বাদি হয়ে এই মামলাটি করেন।
এই মামলাটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কয়েক জন তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর বর্তমানে দুদকের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন মৃধা এই মামলার তদন্ত করছেন।
মনিরের বিরুদ্ধে রাজউকের সিল নকল করে ভূমিদস্যুতার একটি মামলাও রয়েছে।