বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন

রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2020, 01:46 PM
Updated : 21 Nov 2020, 01:47 PM

শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য়ের পাদদেশে ‘টিএসসির সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন’র ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিছক ভাস্কর্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গোটা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আমাদের লাল-সবুজের প্রতিচ্ছবি।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

“বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে তারা আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করেছে। গর্তের ভেতর থেকে তারা আস্ফালন করছে। আমরা বসে থাকেতে পারি না। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। আসুন অমরা এই মৌলবাদী অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই।”

ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য বুঝতে হবে। এই পার্থক্য কাঠামোগত নয়, এটা চেতনাগত। চেতনার মাধ্যমে মূর্তির আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে একটি ভাস্কর্য জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক।”

মুজিববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা ডাকসুর পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম। উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, মুজিববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন। সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।”

টিএসসির গবেষণা সংসদের সভাপতি ইশতিয়াক উদ্দিন বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় ৫০ বছর পরও আজকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেখতে হয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তির বীজ আমরা আজও দেখতে পাই। যেই দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, চার হাজার ছয়শ বিরাশি দিন কারাবরণ করেছেন, সেই্ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার ধৃষ্টতা দেখায়। এ ধরনের ধৃষ্টতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।”

এ সময় তিনি বিজয় দিবসের ‘১৬’ শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানান।

টিএসসির চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিএম জবলীর রহমতের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, নির্বাহী সদস্য তারেক আল মামুন, ডাকসুর সদ্য সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, দুর্বার একাত্তরের তানভীর আহমেদ, সংস্কৃতি কর্মী শিখা বোস প্রমুখ।

রেজাউল করিম ও মামুনুল হকের কুশপুতুল দাহ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের হুমকির প্রতিবাদে চরমোনাই পীর রেজাউল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হকের কুশপুতুল দাহ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন।

বিকালে রাজু ভাস্কর্য়ের পাদদেশে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে জাতির পিতাকে অবমাননা করায় মামুনুল হক ও রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়। এ সময় তাদের কুশপুতুল দাহ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ ও কুশপুতুলিকা দাহ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

# জাতির পিতাকে অবমাননা করার অপরাধে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

# দেশের প্রতিটি বিশ্বিবদ্যালয়, কলেজ ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।

# সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

# বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

# ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

# মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

# মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালী।