মামুন মুক্তি না পেলে কর্মবিরতি ‘চালিয়ে যাবে’ মনোরোগ চিকিৎসকরা

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা . আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দুদিন নিজেদের চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিলেন মনোরোগ চিকিৎসকরা; এখন তারা বলেছেন, সহকর্মীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি তারা চালিয়ে যাবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 12:27 PM
Updated : 22 Nov 2020, 12:31 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার শ্যামলীতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি)।

পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় ডা. মামুনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে সংগঠনটি।

সংগঠনের ডাকে বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের সব মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তাদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএপির সভাপতি অধ্যাপক ওয়াজিউল আলম চৌধুরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এক সপ্তাহ আগে গত ১২ নভেম্বর ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসার নামে জ্যেষ্ঠ এএসপি আনিসুলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এএসপি আনিসুলকে সেদিন প্রথমে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বোন ও ভগ্নিপতি, যারা দুজনই চিকিৎসক। সেখান থেকে নেওয়া হয় বেসরকারি মাইন্ড এইডে।

আনিসুলের বাবা যে হত্যামামলা করেছিলেন, সেই মামলায় মঙ্গলবার ডা. মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ দাবি করেছে, তিনিই আনিসুলকে মাইন্ড এইডে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

তবে পুলিশের এই বক্তব্য নাকচ করেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। মামুনকে গ্রেপ্তারের পর ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।

এর মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে এসে মনোরোগ চিকিৎসকরা বলেন, আনিসুলের চিকিৎসক স্বজনরাই তাকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি না করে মাইন্ড এইডে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে পেশাদার চিকিৎসক থাকায় তারা নিজেরাই ওই বেসরকারি মাইন্ড এইড হাসপাতালকে পছন্দ করেন। ইতোমধ্যে নিজেদের আগ্রহের জায়গা থেকে তারা ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের নম্বর সংগ্রহ করে তার সাথে যোগাযোগ করেন। দালালের মাধ্যমে ডা. মামুনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা “

এদিকে বৃহস্পতিবার মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “হাসপাতালের তদন্ত প্রতিবেদনে এটা প্রতীয়মাণ হয় যে উক্ত রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো পর্যায়েই ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।”

বিএপির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আনিসুলকে যখন আনা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। সেজন্য তিনজন পুলিশ সদস্যও ছিল তাকে শান্ত করার জন্য। ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক  সহকারী অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরাই তাকে সেখানে ভর্তি করতে অসম্মতি প্রকাশ করেন, যা নথিতে লেখা আছে।

আনিসুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ভূমিকার নিন্দাও জানান মনোরোগ চিকিৎসকরা।

“ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে ১৭ নভেম্বর অতি প্রত্যুষে ইনস্টিটিউটের ডর্মিটরি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আতঙ্কিত পরিবার তার খোঁজে থানার গেলেও তাদেরকে প্রথমে তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তাকে আদালতে প্রেরণ করে এবং দুই দিনের রিমান্ডে দেয়।”

আনিসুলের চিকিৎসাসহ সেদিনের কোনো ঘটনায় ডা. মামুনের সম্পৃক্ততা ছিল না দাবি করে বিএপি বলছে, “তাহলে কীভাবে তিনি হত্যা মামলার আসামি হলেন? এ প্রশ্ন আমাদের বিদ্ধ করেছে। আমরা মনে করি, তাকে জোর করে অন্যায়ভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে, যা গর্হিত অন্যায় ও নিন্দনীয়।”