কোভিড-১৯: শীতে সতর্ক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দেশে মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমলেও শীতে বাড়তে পারে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 03:55 PM
Updated : 18 Nov 2020, 06:11 PM

শীত নামার ঠিক আগে কয়েকদিন ধরে শনাক্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।

স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরার সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব, সময়োচিত সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এখন র্পযন্ত কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারীকে সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়ছে।

“এ মুহূতে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও তা আসন্ন শীতকালে আবার বেড়ে যাবে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।”

ইউরোপ ও আমেরিকাকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

শীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকার ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর জোর দিয়েছে। ঘরে বাইরে মাসক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতও নামিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসন্ন শীত মৌসুমে সংক্রমণ যাতে বাড়তে না পারে, সেজন্য ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের পয়েন্ট অফ এন্ট্রিসমূহে আসা যাত্রীদের স্ক্যানিং অব্যাহত রয়েছে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৩ কোটি ভ্যাকসিন আমদানির লক্ষ্যে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মহামারীকালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে জরুরি আপদকালীন অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারার কথাও বলেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৩৫ বিলিয়ন ইয়েন বা ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এডিবি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের টিকাসহ জরুরী চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে, যার আওতায় সংস্থাটি থেকে ৩০ লাখ ডলার অনুদান পাওয়া যাবে।  

এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ১০৫ কোটি ডলার দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ১১০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির কাছ থেকে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের জন্য ১১৩ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশের জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে র্সাবক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারী অভিঘাত সত্ত্বেও প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার নীতি গ্রহণ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনের চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে, ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি সুদৃঢ হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে অষ্টম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে কৃষি উন্নয়নে রোল মডেল।”