গাড়ি পোড়ানো কীসের জন্য: প্রধানমন্ত্রী

কয়েক বছর বাদে আকস্মিকভাবে বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 05:43 PM
Updated : 15 Nov 2020, 08:16 PM

মুজিববর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদে তিনি বলেন, “এরই মধ্যে আপনি দেখেছেন মাননীয় স্পিকার, কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, হঠাৎ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন? কী স্বার্থে?কীসের জন্য?”

ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

বাস পোড়ানোর জন্য বিএনপিকে দায়ী করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। অন্যদিকে বিএনপি দাবি করছে,তাদের ফাঁদে ফেলতে ক্ষমতাসীনরাই বাস পুড়িয়েছে। 

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন হয় … নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নামে অংশগ্রহণ করে। টাকা পয়সা যা পায়, পকেটে নিয়ে থুয়ে দেয়।

“ইলেকশনের দিন ইলেকশনও করে না, এজেন্টও দেয় না,কিছুই করে না। মাঝ পথে ইলেকশন বয়কটের নাম দিয়ে, এরপর বাসে আগুন দিয়ে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। এটার উদ্দেশ্যটা কী?”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের বাজেটের প্রায় ৪ শতাংশের উপর আমরা প্রণোদনা … টাকা পয়সা …  যত যেখানে যা দরকার, আমরা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেন সচল থাকে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

“আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আজকে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। আমরা এডভান্স টাকা-পয়সা দিয়ে ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করে রেখেছি, যাতে যখনই চালু হবে, তখনই যেন আমরা এটা নিতে পারি।”

“যখনই সেটা প্রয়োজন আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি। তাহলে অভিযোগটা কোথায়? সেটাই তো সব থেকে বড় প্রশ্ন।”

‘আসুন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করি’

মুজিববর্ষে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাই মিলে আসুন আমাদের দেশ, এই মাতৃভূমি, এদেশের মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করি। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত,দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।”

সরকারে থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পর আগামী বছর দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ‍সুযোগ পাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “তারা (জনগণ) ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আমাদের পার্লামেন্টে পাঠিয়েছে বলেই দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি,সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছি।”

শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও বলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে যখন বঙ্গবন্ধু কাজ করেছিলেন, তখন তার বিরোধিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।

“তখন একদল লোক তার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, মানুষের বিরুদ্ধে নেমে গিয়েছিল। তারা কারা? তার মানে পাকিস্তানি প্রভুদের দাসত্বকে ভুলতে পারে নাই। তারা সেই দাসত্বটাই চেয়েছিল,স্বাধীনতা না।”

বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেই দ্রুত জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। এদেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা, এটাই ছিল তার লক্ষ্য।

“সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি যেই কাজগুলো করে গিয়েছিলেন সেটা..সমালোচনা এমনভাবে শুরু হয়ে গেল এবং তারপরে তো দুর্ভাগ্য যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল। ফলে এই কাজটা তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেন নাই।”

শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশ ও মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করেনি বলে স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। দেশের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারে আসার জন্যই হয়েছে।

“সত্য কথা বলতে কি ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতা দখল করেছে, তারা তো নির্বাচনে প্রহসন করে করে সিস্টেমটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে।”

‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে রোববার জাতীয় সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলোকচিত্র নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’ উদ্বোধন শেষে ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

‘প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু’

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু’ নামে একটি প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার বিকালে এই প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেছেন, মুজিববর্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী এই প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই সময় বড় পর্দায় জাতির পিতার ৭ মার্চের পুরো ভাষণ দেখেন। প্যাভিলিয়নও ঘুরে দেখেন তিনি।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এই সময় উপস্থিত ছিলেন।