সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেউ কথা বলেনি: প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতার পর অনেকে ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 08:29 AM
Updated : 15 Nov 2020, 11:24 AM

এখন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্রের সেই অপার সম্ভাবনাকে কাজে পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দুইটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল (ওপিভি), পাঁচটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল (আইপিভি), দুইটি ফাস্ট পেট্রোল বোট (এফপিভি) ও বিসিজি বেইজ ভোলা’র কমিশনিং অনুষ্ঠানে রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা সুনাম বজায় রাখতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও ইমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে কোস্ট গার্ডের সদস্যদের নির্দেশনা দেন।

সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে আইন করে দিয়ে যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তারা দেশ ও দেশের মানুষের অধিকারের কথা কখনও বলেনি।

“আমরা যদি জিয়াউর রহমানের সরকারের কথা বলি, এরশাদ সরকারের কথা বলি বা খালেদা জিয়ার সরকারের কথা বলি..যার কথাই বলি..একজনও মেরিটাইম বাউন্ডারিতে আমাদের যে অধিকার আছে, সেই অধিকারের কথাটা কখনও তারা উল্লেখ করেনি।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে সমুদ্রসীমার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। হয়ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, এটা কোনোদিনই প্রতিষ্ঠিত হত না।”

সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে, সরকার ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সমুদ্র সম্পদ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে কাজে লাগাবার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের চেষ্টাই হচ্ছে…কারণ বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাগর। বিশ্বের অনেক ব্যবসা বাণিজ্য এখান থেকেই চলাচল করে। সেদিক থেকে এখানে আমাদের অধিকারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“তাছাড়া আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে যারা বাস করেন…তাদের নিরাপত্তা এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতিটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ তারা সব সময় অবহেলিত। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই সমুদ্র সম্পদকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগাতে চাই।”

কোস্ট গার্ডকে আধুনিক ও যুগোপোযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার দেয়। কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অধিনায়কদের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ হস্তান্তর করেন। কমিশন পাওয়া নয়টি জাহাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৪ সালে ইতালি সফরের সময় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে তিনি ইতালি সরকারের সহযোগিতার কামনা করলে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে ইতালি নৌবাহিনীর চারটি করভেট প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে অফশোর পেট্রোল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। যার দুটি বিসিজিএস তাজউদ্দীন ও বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল জাহাজ ২০১৭ সালে তিনি কমিশনিং করেন। ইতালি থেকে পাওয়া আরও দুইটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল বিসিজিএস মনসুর আলী এবং বিসিজিএস কামারুজ্জামানের কমিশনিং হল রোববার।

পাঁচটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-বিসিজিএস সবুজ বাংলা, শ্যামল বাংলা, সোনার বাংলা, স্বাধীন বাংলা ও অপরাজেয় বাংলা এবং দু’টি ফাস্ট পেট্রোল বোট বিসিজিএস সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া এদিন বাহিনীর বহরে যুক্ত হল।

১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য এখন দেশেই বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে বলেও সরকার প্রধান উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ও খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত আজকের কমিশনিং করা ইনশোর পেট্রোল ভেসেল এবং ফাস্ট পেট্রোল বোটগুলো।
অর্থাৎ আমরা নিজেরাও তৈরি করতে পারি, সেটারই আজ প্রমাণ পেলাম। আজকে আমাদের কাজে লাগল। আগামীতে আমরা রপ্তানিও করব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি এ জাহাজগুলো কোস্ট গার্ডের অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ও নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিজি বেইস ভোলারও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ।”

১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকলেও জাতীয় সংসদে তাদের আনা বিলের কারণেই কোস্ট গার্ড একটি বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোস্ট গার্ড বার্থ প্রান্তে বাহিনীর মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।