প্রতি দুই কিলোমিটারে ডিজিটাল সেন্টার হবে: পলক

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আগামীতে প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন এবং এখানে ৫০০ সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2020, 03:20 PM
Updated : 11 Nov 2020, 03:20 PM

এই সার্ভিস বেইজড প্ল্যাটফর্মকে ‘বিজনেস হাব’ হিসেবে রূপান্তর করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

ডিজিটাল সেন্টারের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সম্মেলন এবং লোকসঙ্গীত (ফোক) কনসার্ট অনুষ্ঠানে পলক একথা বলেন।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর যাত্রা হয় ডিজিটাল সেন্টারের।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, নাগরিকদের কেবল তথ্য দিলেই সেবা সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে আমরা তাদের দোরগোড়ায় সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করি।”

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে ডিজিটাল সেন্টারের ভূমিকা সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখানে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের যাতায়াতের দূরত্ব, নারী-পুরুষ বৈষম্য, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য এবং দুর্নীতি দূর হয়েছে।

“উদ্যোক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পর্যন্ত হাই-স্পিড ইন্টারনেট, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি এবং নতুন সেবার পরিমাণ বাড়াতে আমরা কাজ করছি। আমরা এই সার্ভিস বেইজড প্ল্যাটফর্মকে ‘বিজনেস হাব’ হিসেবে রূপান্তর করার চেষ্টা করছি, এর মাধ্যমে মানবসম্পদ তৈরি করছি এবং আগামীতে প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন ও ৫০০ সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি।”

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “নতুন প্রজন্মের আইসিটিতে নতুন নতুন উদ্ভাবন বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নেবে। আইসিটির সুফল সব জায়গায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “১০ বছর আগে আমরা যখন ডিজিটাল সেন্টারের কাজ শুরু করি, অনেকেই এর সম্ভাব্যতা এবং উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা কীভাবে দেব, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করত। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে সব উদ্যোক্তাদের হাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সমর্থ হই।

“শুরুর দিকে প্রায় এক হাজার ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা তাদের জন্য সোলার এনার্জির ব্যবস্থা করি। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার জন্য।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই দীর্ঘ পথচলা সফল হওয়ার পেছনে আমাদের উদ্যোক্তারাই বার বার আমাদের পথ দেখিয়েছে। তারা আমাদের নির্দিষ্ট সেবাগুলোর পাশাপাশি অনেক নতুন নতুন সেবা নিজ উদ্যোগে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহার ‘গ্রাম হবে শহর’র বাস্তবায়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে।”

স্বাগত বক্তব্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “গ্রামে বসেই মানুষ ২৭০টিরও বেশি সেবা গ্রহণ করছে। দেশজুড়ে মুজিব শতবর্ষ ই-সেবা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চলের নাগরিকরা বিনামূল্যে ই-সেবা পেয়েছেন। পাশপাশি হেলথ ক্যাম্প, সেমিনার, উঠান বৈঠকসহ বার্ণিল আয়োজন ছিল এ ক্যাম্পেইনে।”

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, “ডিজিটাল সেন্টার প্রান্তিক মানুষদের জীবনে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ফলে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হয়েছে।”          

বিগত ১০ বছরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাগরিকদের দোরগোড়ায় সরকারি-বেসরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম ডিজিটাল সেন্টার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

এটুআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ইতোমধ্যে ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে ৫৫ কোটিরও বেশি সেবা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নাগরিকদের ১৬৮ কোটি কর্ম দিবস এবং ৭৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। একই সাথে উদ্যোক্তারা প্রতি মাসে গড়ে ৬০ লাখ সেবা দেওয়ার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪৬৫ কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ডিজিটাল সেন্টার থেকে একজন নাগরিক ২৭০টিরও বেশি নাগরিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। এগুলোর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, নামজারির আবেদন, পর্চার আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি প্রদান ছাড়াও এজেন্ট ব্যাংকিং, অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, বিমান, বাস, লঞ্চ টিকেটিং, মেডিকেল ভিসা ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রেমিটেন্সের সুবিধা অন্যতম।

এটুআই-এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের সঞ্চালনায় অনলাইন সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার আয়োজিত ‘মুজিব শতবর্ষ ই-সেবা ক্যাম্পেইন ২০২০’ এ অংশগ্রহণকারী সেরা উদ্যোক্তাদের সনদ দেওয়া হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী ডিজিটাল সেন্টারের ১০ বছরের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।