পথশিশু সমস্যার সমাধান কোন পথে?

তাহমিদের বোন অন্তরাকে জন্ম দিয়ে মারা যান মা মরিয়ম বেগম; রিকশাচালক বাবা মুরাদ হোসেন সেই থেকে উদভ্রান্ত। মাদকাসক্ত মুরাদ পরিবার থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দাদির কোলে বেড়ে উঠে তাহমিদ ও অন্তরা।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2020, 06:09 PM
Updated : 2 Nov 2020, 06:19 PM

চলতি বছরের শুরুতে তাহমিদকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন দাদি হাসিনা খাতুন। কিন্তু স্কুলে মন বসে না তাহমিদের। এলাকার শিশুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় ঢাকার পথে পথে। বাবার মতো তারও আশ্রয় হয় খোলা আকাশের নিচে। তাহমিদের বর্তমান ঠিকানা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

ঢাকায় এমন হাজারো শিশুর ঠাঁই রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, স্টেডিয়ামগুলোর আশপাশে। আর্থ-সামাজিক নানা টানাপড়েনে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এই শিশুদেরপরিচয় ‘পথশিশু’।

২০০৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের এক জরিপ বলছে, সারা বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১৩ লাখ।

সে জরিপের বিরোধিতা করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর; যদিও পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে তাদেরই জরিপ করার কথা।

বিশ্ব শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়কে পথশিশু পুনর্বাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পর কেটে গেছে পাঁচ বছর। ভাসমান এসব শিশুদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসন কর্মসূচি না আসায় সেসব কর্মসূচির সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ।

পথশিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথে না হাঁটলে কোনো উদ্যোগই কাজে দেবে না।

তবে এবার নড়েচড়ে বসেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কয়েকটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। প্রকল্প প্রণয়ন করে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তারা।

শীতের দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে আগুন জ্বেলে উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টায় কয়েকজন পথশিশু।

অনাদরে ক্লিষ্ট শিশুরা

এক দুপুরে কথা হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুলবিক্রেতা চার বছর বয়সী ইমনের সঙ্গে। ইমনের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। বাবা গত হয়েছেন অনেক আগে, মায়েরও নতুন সংসার হয়েছে।

“আমার কোনো বাসা নাই। আগে মিরপুরের দিকে একটা বস্তিতে দাদা-দাদির লগে থাকতাম । হেরাও বেশিদিন রাখতে পারল না। এরপরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। অহন এই পার্কের ভিতরে থাকি।”

১৪ বছর বয়সী আফরিন (ছদ্মনাম) দাদির সঙ্গে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়।

তার দাদি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার যখন ১০ বছর বয়স, তখন তার বাপে মায়ে আলাদা হইয়া যায়। হের এক বছর বাদে তার দাদাও মারা গেল। তারে নিয়ে আমি ঘুরতে ঘুরতে এখন এই শহীদ মিনারে থাকি। মাইয়াটারে ভালো রাখতে পারলাম না।”

পথে থাকতে থাকতে একদিন পথশিশু আফরিনের পরিচয় হয়ে যায় ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে। পরে সে মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে।

১৩ বছর বয়সী রাসেল থাকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। আগে স্কুলে গেলেও করোনাভাইরাস মহামারীতে পারিবারের আর্থিক টানাপড়েনের কারণে তার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। রাসেলের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। চার মাস ধরে সে পথেই আছে।

রাসেল বলে, “করোনা শুরু হওয়ার পর আব্বার চাকরি যায়। আব্বা গ্রামে যায়। এখন মানুষের জমিতে কামলা দেয়। আমাদের সংসার চলে না। আমার ছোট দুইটা বইন আছে। তারা ঠিকমত খাওন পায় না।

“একদিন এক বড় ভাই কইল, চল ঢাকায় যাই। ট্রেনে কইরা পরে ঢাকায় আসি। সে কইছিল একটা কাজ দিব। কিন্তু কদিন ঘুরায়া টুরায়া কাজ দিল না। গ্যারেজে কামে নিসিল। এখন সেটাও ডাকে না। এখন আমার একটা কাজ লাগব। কাজ না পাইয়া আমি বাড়ি যাব না।”

গবেষণা কী বলছে?

বাংলাদেশে পথ শিশুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে মতদ্বৈততা রয়েছে।

২০০৪ সালে বিআইডিএসের জরিপের বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পথশিশু বিষয়ক সেলের প্রধান আবুল হোসেন বলেন, “এই স্টাডি অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে এবং নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই পথশিশুদের প্রকৃত সংখ্যা বর্তমানে কত, এটা না জানলে তাদের জন্য বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করা ‍দুরূহ হবে।”

মন্ত্রণালয়ও পথশিশুদের সংখ্যা নিরূপনে দ্রুত কাজ শুরু করবে বলে জানান আবুল হোসেন।

২০০৫ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের শতকরা ৪১ ভাগ পথশিশুর ঘুমানোর বিছানা নেই; ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না; ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে, ৮৪ শতাংশ শিশুর শীতবস্ত্র নেই; ৫৪ শতাংশ শিশুর অসুস্থতায় দেখার কেউ নেই; ৭৫ শতাংশ পথশিশু অসুস্থতায় ডাক্তার দেখাতে পারে না।

শিশুদের মাদকাসক্তির চিত্রও ভয়াবহ। শিশু অধিকার ফোরামের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮৫ ভাগ পথশিশু মাদকাসক্ত।

তাদের ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ শিশু ধূমপান, ২৮ শতাংশ নানা ট্যাবলেট, ৮ শতাংশ শিশু ইনজেকশনে আসক্ত।

৮০ শতাংশ শিশু কাজ করে জীবন টিকিয়ে রাখতে; ২০ শতাংশ শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু সার্বিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। 

বাংলাদেশ পথশিশুদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-স্ক্যান মহামারীর মধ্যে গত মার্চে রাজধানীর মহাখালী, এয়ারপোর্ট, কমলাপুর, গাবতলী, সদরঘাটসহ আটটি এলাকায় পথশিশুদের জীবনমান নিয়ে একটি জরিপ চালায়। গত ২৬-৩১ মার্চ পর্যন্ত এ জরিপ চলে।

জরিপে পাওয়া তথ্যের প্রসঙ্গে স্ক্যানের সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির বলেন, “জরিপে আমরা পথশিশুদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে ভয়াল এক অবস্থা দেখতে পাই। ওরা কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস কী সেটা জানেই না।

“সবাই একসাথেই থাকে, স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। ওরা সারাদিন ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে। ওরা তো করোনাভাইরাসের ক্যারিয়ার হতে পারে।”

স্ক্যানের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, মহামারীতে কর্মসংস্থান হারনো পথশিশুরা অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের দায়সারা কাজ

পথশিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তর কী করছে তা জানতে যোগাযোগ করেছিল সমাজসেবা অধিদপ্তরে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম যোগাযোগ করতে বলেন সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগে।

সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মাহফুজা বেগম বলেন, “পথশিশুদের নিয়ে আমাদের আলাদা কোনো কর্মসূচি রয়েছে কিনা আমার মনে পড়ছে না। আমাদের যে সরকারি পাঁচটি ভবঘুরে কেন্দ্র রয়েছে, তাতে ভবঘুরে, অসহায় ভিক্ষুকদের সঙ্গেই পথশিশুদের রাখা হচ্ছে।”

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জের বেতিলায় একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করলেও তার কার্যক্রম ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ। সে আশ্রয়কেন্দ্র আদৌ খোলা হবে কিনা, তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি মাহফুজা বেগম।

তীব্র তাপদাহে এক গ্লাস সরবত খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে দুই পথশিশু। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের দৌড় প্রাথমিক পর্যন্ত

পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে ১৯৮৮ সালে গঠিত পথকলি ট্রাস্টই এখন শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট।

ট্রাস্টের প্রথম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাগ্যাহত, সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র এবং নিজ প্রচেষ্টায় ও শ্রমে ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়াসী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

তবে এ ট্রাস্টের অধীনে ঢাকা মহানগরীসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ে মোট ২০৫টি শিশু কল্যাণ বিদ্যালয় রয়েছে, যার সবই প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত।

ট্রাস্টের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩২ হাজার ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।

ঢাকার কাপ্তানবাজার, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ, রাজৈর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি ও যশোর উপশহরে সর্বমোট নয়টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

পথশিশুদের মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠদানের বিষয়ে নানা মহল থেকে আবেদন এলেও এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘ভাবনা নেই’ বলে জানিয়েছেন শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক হাবিবুর রহমান।

“এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কোনো কথা হয়নি। এমন কোনো ভাবনাও নেই ট্রাস্টের।”

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।

তবে ট্রাস্টের ভাবনায় এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নানা অবকাঠামো নির্মাণ ও শিশুদের বৃত্তির টাকা বৃদ্ধি।

হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা একটা ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেই মত কিছু অর্থ বৃদ্ধি পেলে শিশুদের জন্য বৃত্তির টাকা বাড়বে, স্কুলও বাড়বে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অনলাইনে পাঠদান কর্মসূচি চলমান আছে বলে জানান তিনি।

কিন্তু অনলাইনে পাঠ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস শিশুদের দেওয়া হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

“ওই যে টিভিতে ক্লাস চলে, ওখান থেকে তারা শিখতে পারে তো,” দায়সারা উত্তর তার।

ট্রাস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তাদের ২০৫টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৮১টি নিজস্ব ভবনে, ৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে, ৩৬টি ভাড়া ভবনে, ১৩টি অন্যান্য স্থাপনায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

প্রতিবছর এসব বিদ্যালয়ের ২২০ জন ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। একবার বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও বার্ষিক সন্তোষজনক ফলাফলের ভিত্তিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি সুবিধা ভোগ করে।

২০০০ সাল থেকে চালু হওয়া এই বৃত্তি ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার হাজার ৩০১ জনকে দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি প্রকল্পে আস্থা সিটি করপোরেশনের

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে পথশিশুদের জন্য নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা উত্তরে চারটি ও দক্ষিণে ছয়টি সেন্টার স্থাপন করে পথশিশুদের আশ্রয়ন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছয় বছর পর্যন্ত শিশু ও তাদের পরিবারকে নানা সহযোগিতা দিচ্ছে এ যৌথ প্রকল্প। এ পর্যন্ত প্রায় নয় হাজার পরিবার ও এক হাজার পথশিশু এই প্রকল্পের সেবা পেয়েছে।

শিশুর বয়স ছয় বছর পেরিয়ে গেলে তাদের প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।

তবে প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে উত্তীর্ণ শিশুরা পরবর্তীতে কোথায় যাবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই আনোয়ার হোসেনের কাছে।

“দুই সিটি করপোরেশনের আসলে নিজেদের উদ্যোগ নেই। একটা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেই আমরা কাজ করছি। সেটাও ৫-৬ বছর মেয়াদী। তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে কি হবে জানা নেই আমার।”

মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা

বাংলাদেশ জুড়ে পথশিশুদের জীবনমানের যখন এ হাল, তখন নড়েচড়ে বসেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্যোগে একটি অনলাইন সভায় আসে নানা সুপারিশ।

সে সভায় এক শিশু অধিকারকর্মী জানান, ঢাকা শহরের পথশিশুদের বর্তমান বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা অর্জনের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমীক্ষা পরিচালনায় গুরুত্বারোপ করা হয়।

অনলাইন সভার সুপারিশগুলো হল-

>> করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় শিশুদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

>> গত ২৬ মার্চ লকডাউন শুরুর পর অদ্যাবধি যেসব সেন্টার বা আবাসনে অবস্থানকারী শিশুদের অতিরিক্ত নতুন শিশুর না নেওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

>> বেসরকারি উদ্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে পথশিশুদের সামরিক অবস্থান ও খাদ্য সরবরাহের যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে নিয়মিত প্রোগ্রামের রূপান্তরের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

>> সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পথশিশুদের সহায়তায় যেসব উত্তম চর্চা তাদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা অন্যদের সাথে বিনিময় করতে হবে।

>> ঢাকা শহরের পথশিশুদের বর্তমান বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা অর্জনের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে হবে।

>> কোভিড-১৯, নদী ভাঙ্গন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ভালনারেবিলিটি শনাক্তকরণের লক্ষ্যে একটি ব্যাপক জরিপ সমীক্ষা পরিচালনা করতে হবে।

>> সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এবং চলমান কর্মসূচির আলোকে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম গঠন করা জরুরি।

>> পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত এবং অসহায় শিশুদের জন্য পরিচালিত বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

>> পথশিশু সুবিধাবঞ্চিত এবং অসহায় শিশু যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ, শারীরিক, যৌন, মাদক, হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সকলে সতর্ক দৃষ্টি রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

>> পথে অবস্থানকারী শিশুরা যাতে তাদের পিতামাতা অভিভাবক বা পরিবারের ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রমের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, “আমরা আগে জরিপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। জরিপ করলে জানা যাবে শিশুরা কেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শিশুরা যখন পরিবার থেকে চলে আসে তখন তারা কিন্তু ভালনারেবল। তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, কেউ শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

“আমরা ইতোমধ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটি চূড়ান্ত হলে আমরা পথশিশুদের নিয়ে জোরসোরে কাজ শুরু করব।”