নতুন সাজে দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় চিড়িয়াখানা

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আট মাস বন্ধ থাকা জাতীয় চিড়িয়াখানা নতুন সাজে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য।

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2020, 03:50 AM
Updated : 1 Nov 2020, 04:05 AM

রোববার শর্তসাপেক্ষে খুলছে ঢাকার মিরপুরের এই চিড়িয়াখানার দরজা, দর্শনার্থীদের পদচারণায় আবার ভাঙবে সুনসান নীরবতা।

মহামারীর শুরুতে ২০ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ বিরতির পর একে নবরূপে সাজিয়ে তুলতে চলছে শেষ মুহূর্তের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।

বৃহস্পতিবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিকেট কাউন্টারের সামনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আঁকা হয়েছে বৃত্তাকার চিহ্ন, টানানো হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যানার।

 

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবহার করা হবে একমুখী পথ, সেজন্য দেওয়া হয়েছে দিক-নির্দেশনাও। চিড়িয়াখানার ভেতরে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হচ্ছে করোনাভাইরাসের সতর্কবার্তা।

দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই পাবেন হাত ধোয়ার জন্য নতুন করে বসানো বেসিন, যেখানে সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও থাকবে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আবদুল লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দর্শনার্থীরা প্রবেশের সময় ফুটপাথ ব্যবহার করবেন, সেখানে জীবাণুনাশক দেওয়া আছে। প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানারের তাদের তাপমাত্রা মাপা হবে।

যে শর্তগুলো মেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিড়িয়াখানা খোলার অনুমতি দিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তাতে প্রবেশ ফটকে জীবাণুনাশক টানেল বসানোর নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি।

এবিষয়ে কিউরেটর বলেন, “এটি নিয়ে আসলে বিতর্ক বয়েছে, সেজন্য আমরা তা বাদ দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে।”

সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানার মূল ফটকটি নতুন করে করা হয়েছে। মূল ফটক, ভেতরের রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনায় এখন চলছে শেষ সময়ের সজ্জার কাজ।

সেখানে কর্মরত রঙমিস্ত্রি ইয়াসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে চিড়িয়াখানা খুলবে তাই নতুন করে সবকিছু করা হচ্ছে। আমরা এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছি। শনিবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।”

প্রাণীদের নিরাপত্তা খাঁচায়ও চলছে ঝালাইয়ের কাজ; সংস্কার করা হচ্ছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার।

চিড়িয়াখানার প্লাম্বার আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন করে সব পানির লাইন করছি, কাজ প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে খোলার পর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যবস্থা করছি।”

শেষ করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও। সব মিলিয়ে পুরো চিড়িয়াখানায় এখন সাজ সাজ রব।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের চমক দিতেই নতুন আঙ্গিকে চিড়িয়াখানার সবকিছু সাজানোর কথা বললেন কিউরেটর।

“আমরা প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরকে ঢেলে সাজাচ্ছি। অ্যাকুরিয়ামে মাছের ব্যবস্থা করছি। কিছু প্রাণী, বডি আছে- সেগুলোকে নতুন সাজে সজ্জিত করছি। প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, এখন আমরা অপেক্ষা করছি দর্শনার্থীদের জন্য।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম রোববার চিড়িয়াখানায় বিনামূল্যে প্রবেশ করা যাবে বলে জানান তিনি।

লতিফ বলেন, “প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরে দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর বিনামূল্যে আলোকচিত্রও দেখতে পারবেন।”

সীমিত সময়ে সীমিত দর্শনার্থী

দীর্ঘদিন পর চিড়িয়াখানা খুললেও করোনাভাইরাসের কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যার সঙ্গে সীমিত করা হয়েছে পরিদর্শনের সময়ও। আগে দিনে আট ঘণ্টার জায়গায় এখন ৬ ঘণ্টা খোলা থাকবে। পরিস্থিতির অবনতি হলে চিড়িয়াখানা আবার বন্ধ করে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।

আগে যেখানে প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার মানুষের আনাগোনা থাকত, এখন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানান আবদুল লতিফ।

“পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকের ‍দিকে যায় তাহলে হয়ত সময়টা বাড়াব। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করব।”

সামাজিক দূরত্ব মেনে সরাসরি টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হবে বলে তিনি জানান।

“এখানে যারা দর্শনার্থী হিসেবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে অনলাইনে টিকেটের ব্যবস্থা করা যায়। এটা একটু সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুলও বটে।”

ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

যেসব নিয়ম মানতে হবে দর্শনার্থীদের

>> চিড়িয়াখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় অমোচনীয় রঙ দিয়ে চিহ্নিত বৃত্তাকার স্থানে অবস্থান করতে হবে

>> প্রবেশ ফটকে ফুটবাথ ব্যবহার করতে হবে

>> ভেতর প্রবেশের পর দিক নির্দেশক অনুসরণ করে একমুখী পথ ব্যবহার করতে হবে

>> বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে

>> খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না

>> ভেতরে ভিড় বা জটলা করা যাবে না

প্রাণীদের নিরাপত্তা

দর্শনার্থী না থাকায় এতদিন নতুনভাবে প্রাণ পেয়েছিল চিড়িয়াখানার প্রাণীরা, তাতে ছেদ পড়বে রোববার। মহামারীর কারণে প্রাণিদের জন্য বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন কিউরেটর।

তিনি বলেন, “পশুপাখির শেডের সাইড দিয়ে কোনটার এক স্তর, কোনটার দ্বি-স্তর, কোনটার তিন স্তর বিশিষ্ট প্রটেকশন আমরা নিয়েছি। ‍দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেব।”

দর্শনার্থীদের থেকে প্রাণীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অ্যানিমেল কেয়ারটেকাররা খুব সচেতন। যেখানে দর্শনার্থী যেতে পারে, সেখানে তারা বিষয়টা দেখভাল করবেন। কোনো পশু শান্ত বা হিংস্র হোক, তার কাছাকাছি দর্শনার্থী যাবে এরকম সম্ভাবনা আসলে নাই।”

দর্শনার্থীরা যাতে প্রাণীদের খাবার দিতে না পারে, সেদিকেও নজরদারি রাখা হবে বলে জানান আবদুল লতিফ।

এতদিন ‘নিরুপদ্রবে’ থাকা পশুপাখিরা দর্শনার্থী এলেও ভালো থাকবে বলে মনে করেন চিড়িয়াখানার কিউরেটর।

“আমাদের কোনো প্রাণী কোনো অসুখে ভুগছে না। তাদের প্রজনন ক্ষমতাও বেড়েছে।”

মহামারীতে
শতাধিক
নতুন
অতিথি

১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় মহামারীর মধ্যে জন্মেছে ১১৬টি শাবক, যেখানে আগে ছিল ২৭০০ বন্যপ্রাণী।

নতুন জন্মানো শাবকগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি জিরাফ, দুটি জলহস্তি, ১৮টি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, একটি ঘোড়া, দুটি ইম্পালা, দুটি গাধা, একটি কমন ইল্যান্ড, ২৩টি ময়ূর, ১৩টি ইমু, ৩০টি বক, সাতটি ঘুঘু, ১৫টি কবুতর।
নতুন-পুরাতন মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় এখন ২৮১৬টি প্রাণী রয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে কোনো প্রাণী আনা সম্ভব হয়নি জানিয়ে কিউরেটর আবদুল লতিফ বলেন, “আমরা অর্ডার করেছিলাম, কিন্তু পাইনি।”