রোববার শর্তসাপেক্ষে খুলছে ঢাকার মিরপুরের এই চিড়িয়াখানার দরজা, দর্শনার্থীদের পদচারণায় আবার ভাঙবে সুনসান নীরবতা।
মহামারীর শুরুতে ২০ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ বিরতির পর একে নবরূপে সাজিয়ে তুলতে চলছে শেষ মুহূর্তের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
বৃহস্পতিবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিকেট কাউন্টারের সামনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আঁকা হয়েছে বৃত্তাকার চিহ্ন, টানানো হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যানার।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবহার করা হবে একমুখী পথ, সেজন্য দেওয়া হয়েছে দিক-নির্দেশনাও। চিড়িয়াখানার ভেতরে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হচ্ছে করোনাভাইরাসের সতর্কবার্তা।
দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই পাবেন হাত ধোয়ার জন্য নতুন করে বসানো বেসিন, যেখানে সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও থাকবে।
যে শর্তগুলো মেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিড়িয়াখানা খোলার অনুমতি দিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তাতে প্রবেশ ফটকে জীবাণুনাশক টানেল বসানোর নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি।
সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানার মূল ফটকটি নতুন করে করা হয়েছে। মূল ফটক, ভেতরের রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনায় এখন চলছে শেষ সময়ের সজ্জার কাজ।
প্রাণীদের নিরাপত্তা খাঁচায়ও চলছে ঝালাইয়ের কাজ; সংস্কার করা হচ্ছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার।
শেষ করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও। সব মিলিয়ে পুরো চিড়িয়াখানায় এখন সাজ সাজ রব।
“আমরা প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরকে ঢেলে সাজাচ্ছি। অ্যাকুরিয়ামে মাছের ব্যবস্থা করছি। কিছু প্রাণী, বডি আছে- সেগুলোকে নতুন সাজে সজ্জিত করছি। প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, এখন আমরা অপেক্ষা করছি দর্শনার্থীদের জন্য।”
লতিফ বলেন, “প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরে দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর বিনামূল্যে আলোকচিত্রও দেখতে পারবেন।”
সীমিত সময়ে সীমিত দর্শনার্থী
আগে যেখানে প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার মানুষের আনাগোনা থাকত, এখন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানান আবদুল লতিফ।
“পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকের দিকে যায় তাহলে হয়ত সময়টা বাড়াব। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করব।”
“এখানে যারা দর্শনার্থী হিসেবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে অনলাইনে টিকেটের ব্যবস্থা করা যায়। এটা একটু সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুলও বটে।”
ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
যেসব নিয়ম মানতে হবে দর্শনার্থীদের >> চিড়িয়াখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় অমোচনীয় রঙ দিয়ে চিহ্নিত বৃত্তাকার স্থানে অবস্থান করতে হবে >> প্রবেশ ফটকে ফুটবাথ ব্যবহার করতে হবে >> ভেতর প্রবেশের পর দিক নির্দেশক অনুসরণ করে একমুখী পথ ব্যবহার করতে হবে >> বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে >> খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না >> ভেতরে ভিড় বা জটলা করা যাবে না |
প্রাণীদের নিরাপত্তা
দর্শনার্থী না থাকায় এতদিন নতুনভাবে প্রাণ পেয়েছিল চিড়িয়াখানার প্রাণীরা, তাতে ছেদ পড়বে রোববার। মহামারীর কারণে প্রাণিদের জন্য বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন কিউরেটর।
দর্শনার্থীদের থেকে প্রাণীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অ্যানিমেল কেয়ারটেকাররা খুব সচেতন। যেখানে দর্শনার্থী যেতে পারে, সেখানে তারা বিষয়টা দেখভাল করবেন। কোনো পশু শান্ত বা হিংস্র হোক, তার কাছাকাছি দর্শনার্থী যাবে এরকম সম্ভাবনা আসলে নাই।”
এতদিন ‘নিরুপদ্রবে’ থাকা পশুপাখিরা দর্শনার্থী এলেও ভালো থাকবে বলে মনে করেন চিড়িয়াখানার কিউরেটর।
“আমাদের কোনো প্রাণী কোনো অসুখে ভুগছে না। তাদের প্রজনন ক্ষমতাও বেড়েছে।”
১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় মহামারীর মধ্যে জন্মেছে ১১৬টি শাবক, যেখানে আগে ছিল ২৭০০ বন্যপ্রাণী।
করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে কোনো প্রাণী আনা সম্ভব হয়নি জানিয়ে কিউরেটর আবদুল লতিফ বলেন, “আমরা অর্ডার করেছিলাম, কিন্তু পাইনি।”