আসকের মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি ইউনিটের সহকারী সমন্বয়ক তামান্না হক রীতির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৩ জন নাগরিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও অগাস্টে সে সংখ্যা নেমে আসে তিন জনে।
এরপর সেপ্টেম্বরে তিনজন ও অক্টোবরেও তিনজন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে তার গবেষণায় উঠে আসে।
বাংলাদেশের নানা গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ শেষে ‘বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতির সংখ্যাগত চিত্র’-শিরোনামের গবেষণাপত্রটি বৃহস্পতিবার আসকের এক অনলাইন সভায় উপস্থাপন করেন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৩ জন, মার্চে ৩৭ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এপ্রিলে সে সংখ্যা ১৬ জনে নেমে আসলেও পরে জুাই মাসে তা বেড়ে ৫০ জনে উন্নীত হয়েছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে রীতি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও কথিত ক্রসফায়ারে মোট ২১৯ জন মারা গেছেন। এ সময়কালে কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ৬৩ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৬ জন এবং হাজতি ৩৭ জন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এ ভার্চুয়াল সভায় বলেন, “বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লংঘন। কোনো বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না। কমিশনও এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কোনোভাবেই এমন হত্যাকাণ্ড কমিশন মেনে নেয় না।”
এ ভার্চুয়াল সভায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকাসহ দেশের মোট ২২টি জেলা থেকে প্রায় ৫৫ জন এ আলোচনায় অংশ নেন বলে জানিয়েছে আসক।
আসকের গবেষণাপত্র বলছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৩০৭ জন, যার মধ্যে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হন ২৭০ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন নারী।
এ সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১৩ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৮০ জন নারী।
এ সময়কালে ১ হাজার ৩৯৮ জন শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার এবং ৪৭৪ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। মোট ১ হাজার ৩৯৮ শিশুর মধ্যে ৮২৪ শিশু ধর্ষণ এবং কমপক্ষে ২৫ জন ছেলে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থানে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নাছিমা বেগম বলেন, “ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো ঘটনায় কমিশন উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিৎ করার কোনো বিকল্প নেই।
“ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের বোঝাতে হবে এক্ষেত্রে তার কোনো দায় নেই, সব দায় বা অপরাধ ধর্ষকের, ভয় তাকে পেতে হবে। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যাতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংরক্ষণ করে সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে।”
পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো জাতীয় গণশুনানি আয়োজন করে ধর্ষণের মূল কারণ উদঘাটন এবং এ বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অনলাইন সভায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের মহাসচিব নূর খান উপস্থিত ছিলেন।