‘বলাৎকারকে’ ধর্ষণ গণ্য করতে সরকারকে আইনি নোটিশ

আইন সংশোধন করে ‘বলাৎকার’কে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 02:11 PM
Updated : 29 Oct 2020, 02:11 PM

তার জন্য দণ্ডবিধির ৩৭৫ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় নারী শিক্ষক নিয়োগ করে পাঠদানের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে নোটিশে।

ল’ অ্যান্ড লাইফ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাওছার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব, শিক্ষা সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিব, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে ডাক ও ই-মেইলে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।

নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দণ্ডবিধিতে বলাৎকারের শাস্তির বিধান আছে, যা অন্যান্য আইনের সাথে আবার সাংঘর্ষিক। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় এটাকে (বলাৎকার) বলা হয়েছে ‘আন ন্যাচারাল অফেন্স’ অস্বাভাবিক অপরাধ। অন্যান্য অস্বাভাবিক অপরাধের মতোই দেখা হচ্ছে।

“যাবজ্জীবনের শাস্তির বিধান থাকলেও একে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। কিন্তু এটা তো সরাসরি ধর্ষণ। যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়।  

“অথচ আমাদের দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে মাদ্রাসাগুলোতে অহরহ বলাৎকারের ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নাই। অপরাধীরা সে সুযোগটাই নিচ্ছে।”

এ আইনজীবী বলেন, “প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। ফলে বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”  

নোটিশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী।

নেটিশে বলা হয়েছে, “দেশে আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এসব মাদ্রাসায় শুধু পুরুষ শিক্ষকদের অধীনে প্রায় কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অথচ এই মাদ্রাসাগুলোতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। যে কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ধর্ষণসহ যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। এসব যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ফলে অনেক ছাত্র মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে মাদ্রাসার শিক্ষকসহ পুরুষরা এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে।”

দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে, তাহলে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে (যার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে) দণ্ডিত হবে এবং এতদ্ব্যতীত অর্থদণ্ডেও দণ্ডণীয় হবে।