হাজী সেলিমের পক্ষের ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন

সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম এবং তার ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ যখন সংবাদমাধ্যমে আসছে, তখন পুরান ঢাকার একদল ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন- সব ‘অপবাদ’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 11:55 AM
Updated : 29 Oct 2020, 11:55 AM

ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ‘ব্যাহত হচ্ছে’ বলেও দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’ এর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক পরিস্থিতি জানাতে এবং যানজট নিরসনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন তারা ডেকেছেন।

লিখিত ওই বক্তব্যের ছয়টি পয়েন্টের মধ্যে প্রথম তিনটিতে যানজট নিরসন, ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর না কাটা, প্যাকেজ ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানানো হয়। আরেকটি পয়েন্টে ময়লা পরিষ্কারের ফি কমানোয় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।   

পঞ্চম পয়েন্টে এসে মোতালেব বলেন, “পুরাতন ঢাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, যিনি সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন, বর্তমানে তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার, যেমন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াতে সম্প্রচার করা হচ্ছে; যাতে পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীদের চলমান ব্যবসা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

“এ সাংসদের বিরুদ্ধে যে সকল অপবাদ হচ্ছে, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়ীবৃন্দ হলফ করে ঘোষণা করছি যে, তিনি তিন তিনবার সংসদ সদস্য থাকাকালীন আমাদের কোনো ব্যবসায়িক সমিতি বা সংগঠনে অদ্যাবধি তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো অভিযোগ আজও আমরা পাইনি।”

সোমবার পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবী দাস লেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

হাজী সেলিম ও তার পরিবারকে ঘিরে এই ঘটনাপ্রবাহে ‘গভীর দুঃখ’প্রকাশ করা হয় এই ব্যবসায়ী দলটির সংবাদ সম্মেলনে।

গত রোববার রাতে ধানমণ্ডিতে হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে এসে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর সোমবার থানায় মামলা হয়।

সাংসদের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম এবং তিন কর্মচারীকে সেখানে আসামি করা হয়।

এরপর ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবী দাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়িতে সোমবার দিনভর অভিযান চালায় র‌্যাব। তল্লাশিতে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকি পাওয়ায় কথা জানানো হয়।

এ সময় মাদক রাখায় ইরফানকে এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলাও করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ইরফানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মারধরের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

এদিকে ইরফান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার এবং সাংসদ হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে।

‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’ এর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাংসদের মদিনা গ্রুপ ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘যেভাবে প্রচার’ চালানো হচ্ছে, তাতে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘গভীর আতঙ্কে’ রয়েছেন।

আবু মোতালেব বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তার (হাজী সেলিম) এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য মিডিয়া পরিবারকে সবিনয় অনুরোধ করছি।”

মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন