প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে রাবি উপাচার্যর বিষয়ে সিদ্ধান্ত: শিক্ষামন্ত্রী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 11:14 AM
Updated : 29 Oct 2020, 11:14 AM

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “ইউজিসিকে তদন্ত করতে বলেছিলাম, তারা তদন্ত করেছে। রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব। এখনও আমরা এটি নিয়ে বসিনি।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সচিব অসুস্থ থাকায় এখনও এই বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারিনি, উনি সুস্থ হয়ে ফিরে এলেই এই বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে করা এই তদন্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষকরা কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতেছেন বলে একজন সাংবাদিক শিক্ষামন্ত্রীকে জানান।

দীপু মনি বলেন, “কাদা ছোড়াছুড়ি দুঃখজনক। বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যখন কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তখন অবশ্যই সেটিকে নিয়ম ও আইন অনুযায়ী তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

“আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি সেটি তার ব্যতিক্রম নয়, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে, সে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য ইউজিসি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি।

“কাদা ছোড়াছুড়ি হওয়া উচিত ছিল না। আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যারা জড়িত আছেন তাদের সকলেই তাদের সম্মান, প্রতিষ্ঠানের সম্মান, তাদের যে পেশা সেটির সম্মানের কথা মাথায় রেখেই তারা যেখানে কথা বলেন, যে ধরনের আচরণ করেন- এসব মাথায় রেখেই করেন।”

এই তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইউজিসির একজন সদস্যের কমিশনে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সমর্থক শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “ইউজিসির কোনো সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বিধি-বিধান অনুসরণ করেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ইউজিসি গণশুনানি করতে পারে কিনা, সে বিষয়ে কমিশনের আইন খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

“গণশুনানি ইউজিসির তদন্ত প্রক্রিয়ায় আছে কিনা বা নির্ধারিত আইনে এখতিয়ার আছে কিনা, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিবেচনা করব। যদি প্রক্রিয়া না মেনেই তদন্ত হয় তবে তদন্তই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে কম যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের কন্যা ও জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এছাড়া যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সত্যতা ইউজিসির তদন্তদল পেয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে সেসব নিয়োগ বাতিলে নির্দেশের সুপারিশও করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে ইউজিসি।

এই তদন্ত করতে গিয়ে গণশুনানিসহ বিভিন্নভাবে তদন্ত করেন ইউজিসির দুই সদস্য। তবে উপাচার্য গণশুনানিতে হাজির না হয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

অধ্যাপক সোবহান ২০১৭ সালের মে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত একই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।