মহামারীতে বিলম্বিত স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ হল ৭ মাস পর

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত কমান্ডার আবদুর রউফ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুহম্মদ আনোয়ার পাশাসহ নয়জন ব্যক্তি এবং ভারতেশ্বরী হোমসকে দেওয়া হল এবারের স্বাধীনতা পুরস্কার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 06:45 AM
Updated : 29 Oct 2020, 09:18 AM

প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই বেসামরিক পুরস্কার বিতরণ করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার সেই অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। 

সাত মাস পর বৃহস্পতিবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সেই অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক তুলে দেন পুরস্কারজয়ী ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে।

ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা সকলে আপনাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসা সেবায় বলেন, শিক্ষায় বলেন, সংস্কৃতিতে বলেন... প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনাদের অবদান রয়েছে। কাজেই আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমরা যেন স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারি।”

এ বছর কারা স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন, সেই নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ঘোষণা করেছিল গত ২০ ফেব্রুয়ারি। পরে একটি নাম বাদ দিয়ে ১২ মার্চ সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। 

কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ ও লেখক-অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ছাড়াও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও আজিজুর রহমান বাংলাদেশের বেসামরিক সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী এবং অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুকতাদিরকে দেওয়া হয়েছে এ পুরস্কার।

এছাড়া সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস ও অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার এবং শিক্ষায় ভারতেশ্বরী হোমসকে এই পদক দেওয়া হয়েছে এ বছর।

পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পাঁচ লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র।

মহামারীর কারণে এবার স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণী বিলম্বিত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মার্চে করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছেন...। সে কারণে আমরা ২৫ মার্চের অনুষ্ঠানটা করতে পারিনি।

“তারপরে আমি চিন্তা করলাম যে যেহেতু স্বাধীনতা পুরস্কার, এটা যেভাবেই হোক সকলের হাতে তুলে দেওয়া এটা আমাদের কর্তব্য। সে কারণে এই ব্যবস্থাটা আমাদের নিতে হলে। এইটুকু আমরা যে দিতে পারলাম, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।

সরকারপ্রধান বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষ যখন একটা সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য অবদান রাখে, তাদের একটা সম্মান করা, গুণীজনের সম্মান করা- এটা আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য। সেই থেকে আমরা এই ব্যবস্থাটা নিয়েছি।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্য যারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জনকল্যাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন- তাদের যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদানের দায়িত্ববোধ থেকে দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেওয়া হয়।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।