মারধরের মামলায় ইরফান ও দেহরক্ষী ৩ দিনের রিমান্ডে

নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকআদালত প্রতিবেদক ও , বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 06:57 AM
Updated : 28 Oct 2020, 05:15 PM

ধানমণ্ডি থানা-পুলিশের করা সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর বুধবার এই আদেশ দেন।

এদিকে র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলাতেও ইরফান ও জাহিদকে সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করা হবে বলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানিয়েছেন।

ইরফান সেলিম ও মোহাম্মদ জাহিদ মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহারের অপরাধে ইতোমধ্যে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পুরান ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

গত রোববার রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় সোমবার ধানমণ্ডি থানায় ইরফান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার পরিদর্শক আশফাক রাজীব হাসান মঙ্গলবার ইরফান ও জাহিদকে রিমান্ডে চেয়ে আদালতে আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য বুধবার দিন রাখেন।

সে অনুযায়ী বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। পরে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে ধানমণ্ডি থানার মামলায় তাদের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “আসামিরা নিরীহ ব্যক্তিকে কেন এভাবে মারধর করল। আসামিদের রিমান্ডে নিলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও আছে। তাদের পরিচয় জানতেও দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।”

অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, “ইরফান যে বাদীকে মেরেছে, এমন কথা এজাহারে বলা নাই। কে না কে মেরেছে সেটা সুনির্দিষ্ট না।

“বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় গেল। সব দেখে তাকে গ্রেপ্তার করল, সাজাও দিল। যা কিছু আছে, যা নাই- তা সহ সাজা হল। মারামারির জন্য রিমান্ডের কী দরকার। প্রমাণ হলে সাজা হবে না হলে খালাস পাবে। এখানে রিমান্ডের কিছু নাই।”

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

এ মামলার আরেক আসামি এবি সিদ্দিক দীপুকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকেও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর তার আগের দিন ইরফানের গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

এদিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার জেরে সোমবার ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবী দাস লেইনে সাংসদ হাজী সেলিমের বাড়িতে দিনভর অভিযান চালায় র‍্যাব। তল্লাশিতে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকি পাওয়ায় কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

এ সময় মাদক রাখায় ইরফানকে এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর তার দেহরক্ষী জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে চকবাজার থানায় ওই দুইজনের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও করা হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

ইরফানের কাছ থেকে একটি অবৈধ একটি পিস্তল ও একটি অবৈধ এয়ারগান উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে এবং কয়েক বোতল মদ পাওয়ায় মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একইভাবে জাহিদের কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধারের অভিযোগে অস্ত্র আইনে এবং ৪০৬টি  ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে।

চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

গাড়িচালক মিজান কারাগারে

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় ইরফানের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হেফাজতে নিয়ে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার তাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার পরিদর্শক আশফাক রাজীব হাসান।

তিনি আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে তাতে সায় দিয়ে আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।

পুরনো খবর