রায়ের পর্যায়ে এসে পুনঃবিচারে গেল ওয়াশিকুর হত্যা মামলা

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় আবার শুরু থেকে বিচার হবে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2020, 07:22 AM
Updated : 27 Oct 2020, 07:28 AM

কয়েকটি আইনি ত্রুটি ও জটিলতার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পুনঃবিচারের আবেদন করায় মঙ্গলবার আর রায় হয়নি।

আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করে সব সাক্ষীর সাক্ষ্য আবার নিতে আদালতে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার।

সেই আবেদন গ্রহণ করে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল ইসলাম নতুন করে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৪ নভেম্বর দিন ঠিক করে দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলাটি ২২৭ ধারা মোতাবেক অভিযোগ সংশোধন করে দণ্ডবিধির ১২০(বি) ধারায় পুনঃঅভিযোগ গঠন করার আবেদন করেন। 

ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৭ ধারায় বলা হয়েছে, রায় প্রকাশ করার আগে যে কোনো পর্যায়ে আদালত অভিযোগ পরিবর্তন করতে পারে।

দণ্ড আইনের ১২০(বি) ধারায় বলা হয়েছে অপরাধজনক ষড়যন্ত্রের কথা।

পুনরায় অভিযোগ গঠনের আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম ঘটনার সময় অন্য একটি নাশকতার মামলায় কারাগারে ছিলেন। সুতরাং তিনি প্রত্যক্ষভাবে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। তিনি কারাগারে থেকেই হত্যার একজন ষড়যন্ত্রকারী ও পরামর্শক হিসাবে তাজ করেছিলেন।

সাইফুলকে কারাগার থেকে এনে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিন্তু আগের বিচারক স্পর্কাতর এ মামলায় অভিযোগ গঠনের সময় সাইফুলের ব্যাপারে সে কথা উল্লেখ করেননি। এ আসামিকে এ ধারার (১২০বি) অভিযোগে যুক্ত করেননি, যা মামলার বিচারে মারাত্মক একটি ত্রুটি। আর যে কারণে সাইফুলকে মামলায় সাজা দেওয়াও হত ত্রুটিযুক্ত।”

২০১৬ সালের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছিলেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এসএম জিয়াউর রহমান।

পাঁচ বছর এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় গত ৪০ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর গত ৪ অক্টোবর জজ রবিউল ইসলাম ২৭ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন।

এ মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান এবং সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

আর মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরাকে পলাতক দেখিয়েই মামলার বিচার কাজ চলে।

কারাগারে থাকা তিন আসামি গত ১০ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ওয়াশিকুর, যিনি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখতেন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই জনতা ধাওয়া করে মাদ্রাসাছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে ধরে ফেলে। আর সাইফুলকে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

ঘটনার পরদিন চারজনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন নিহতের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

এরপর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ আনসারুল্লাহর পাঁচ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, এই পাঁচ আসামির মধ্যে পলাতক আব্দুল্লাহ হত্যার পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিলেন।

ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে না আসায় পরে রাষ্ট্রপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তিনি নোয়াখালীতে তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন না। ঘটনার বেশ কিছুদিন পর জীবিকার তাগিদে তিনি সৌদি আরবে চলে গেছেন।

তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে দেশে এনে সাক্ষ্য দেওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজ হয়নি। সে কারণে নিয়ম অনুযায়ী মামলার রেকর্ডিং কমকর্তা তেজগাঁও থানার তখনকার ওসি সালাহউদ্দিন বাদী মো. মনির হোসেন মাসুদের এজাহারের সই শনাক্ত করেন। 

২৭ বছর বয়সী ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার বাবার নাম টিপু সুলতান, বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে।

সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি মূলত লেখালেখি করতেন ফেইসবুকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখিতে সক্রিয় রাজীব হায়দারকে খুন করা হয় একই কায়দায়। ওই মামলার রায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে আদালত।

রাজীব হত্যার পর আরও অন্তত ছয়জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, প্রকাশক একই কায়দায় খুন হন। এর মধ্যে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার বিচার চলছে।