ইরফান সেলিম ও দেহরক্ষীর ১ বছর করে কারাদণ্ড

মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2020, 01:07 PM
Updated : 26 Oct 2020, 06:59 PM

সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এই দণ্ড দেওয়া হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই দণ্ডের পাশাপাশি দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হবে।

ইরফান ও তার সহযোগীদের হাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা মারধরের শিকার হওয়ার জের ধরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সোয়ারিঘাটের দেবদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন।

সাদা রঙের নয়তলা ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ইরফান সেলিম থাকেন জানিয়ে বিকালে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেছিলেন, ওই দুই ফ্লোর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার পাওয়া গেছে।

“আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। আর ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ, কালো রঙের এসব ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন।” 

মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করার অপরাধে ইরফান ও তার দেহরক্ষীকে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে আশিক বিল্লাহ জানান।

রোববার রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় সোমবার একটি মামলা হয় থানায়।

তাতে ইরফান সেলিম ছাড়াও হাজী সেলিমের প্রোটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পথরোধ করে সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, জখম ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন মামলার বাদী নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খান।

মামলা হওয়ার পরপরই গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী জানিয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে কলাবাগানের দিকে যাচ্ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের ল্যান্ড রোভার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৭৩৬) পেছন থেকে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।

ওয়াসিফ ও তার স্ত্রী ধাক্কা সামলে মোটরসাইকেল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই গাড়ি থেকে জাহিদ, দিপু এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজন ‘অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করতে করতে নেমে আসে এবং ‘মারধর’ শুরু করে।

তারা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ ও তার স্ত্রীকে ‘উঠিয়ে নেওয়ার এবং হত্যার’ হুমকি দেয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পরে একজন প্রত্যক্ষদর্শী মোবাইল ফোনে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফের বক্তব্য ধারণ করেন, যা ইতোমধ্যে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নৌবাহিনীর এই কর্মকর্তাকে রক্তাক্ত মুখে বলতে শোনা যায়, তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়েছে, তার স্ত্রীর গায়েও ‘হাত দিয়েছে’।

নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সোমবার দুপুরে সোয়ারি ঘাট এলাকায় সাংসদ হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র‌্যাব। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

এর জের ধরে হাজী সেলিমের ওই বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই চতুর্থ তলা থেকে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে ‘হেফাজতে’ নেওয়ার কথা জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

ইরফান সেলিম নিজেও একজন জনপ্রতিনিধি; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি।

নির্বাচনী হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ব্যবসায় প্রশাসনে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেওয়ার কথা লিখেছিলেন তিনি। প্রায় ২৯ বছর বয়সী ইরফান বাবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্রুপের একজন পরিচালক।

গেল ফেব্রুয়ারিতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামায় ইরফান তার কাছে নগদ ৩০ লাখ টাকা এবং শেয়ার ও বন্ডে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা লিখেছিলেন।

ইরফানের বাবা হাজী সেলিম বর্তমানে ওই এলাকার সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিম এর আগেও দুই দফায় পুরান ঢাকার এই এলাকার  সংসদ সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে ২০১৪ সালে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।