নিক্সন চৌধুরীর জামিন বহাল

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে হাই কোর্ট থেকে দেওয়া আগাম জামিনে হস্তক্ষেপ করেনি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2020, 10:50 AM
Updated : 22 Oct 2020, 10:50 AM

জামিন আটকাতে রাষ্ট্রপক্ষ যে আবেদন করেছিল, চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বৃহস্পতিবার তাতে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন।

ফলে এ সংসদ সদস্যকে দেওয়া হাই কোর্টের জামিন বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

জামিনে হস্তক্ষেপ না করলেও বিচারক প্রশ্নে রেখেছেন, একজন সংসদ সদস্য হয়ে নিক্সন চৌধুরী ‘এসব’ কথা (জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোনে যা বলেছেন) বলতে পারেন কিনা।

এরপর বিচারক বলেন, “যেহেতু এটি একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের আগাম জামিন, তাই এতে হস্তক্ষেপ করছি না, নো অর্ডার।”

আদালতে সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সাহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

আদেশের পর আইনকজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টে আট সপ্তাহের যে জামিন আমরা পেয়েছিলাম, তা স্থগিতের আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। সে আবেদনে নো অর্ডার দিয়েছেন চেম্বার আদালত। তার মানে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকছে।”   

বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের বেঞ্চ গত মঙ্গলবার শর্তসাপেক্ষে আট সপ্তাহের জামিন দেয় নিক্সন চৌধুরীকে।

শর্ত হল: মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না; স্থানীয় প্রশাসনকে কোনো ভয়ভীতি দেখানো যাবে না এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে।

হাই কোর্টে জামিন শুনানিতে নিক্সন চৌধুরীর আইনজীবী শাহদীন মালিকের যুক্তি ছিল, আইনগতভাবে কারো টেলিফোন কনভারসেশন রেকর্ড করার ক্ষমতা কারো নাই। ফলে তা রেকর্ডিং সাক্ষ্য হিসেবে আসতে পারে না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ৭১(ক) ধারা অনুযায়ী কারো কল রেকর্ড করতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাক্ষরে অনুমোদন লাগে। অথচ মামলার এজাহারে এরকম একটি কল রেকর্ডিংয়ের কথা বলা হয়েছে।

হাই কোর্টের একটি রায় থেকে উদ্ধৃত করে শাহদীন মালিক বলেছিলেন, কারো অজান্তে কল রেকর্ড করা বেআইনি, ফাঁস করা বেআইনি। আর সংবিধানের ৪৩ ধারায় যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় আগাম জামিন নিতে গত মঙ্গলবার হাই কোর্টে উপস্থিত হন ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে ‘মিছিল, মিটিং, শোডাউন করে’ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু এজাহারে নিক্সন চৌধুরী ছাড়া আর কারো নাম বা অজ্ঞাত কারো কথা উল্লেখ নেই। ফলে একজনের পক্ষে মিছিল, মিটিং, শোডাউন করে আচরণবিধি লঙ্ঘন কারা কীভাবে সম্ভব- সেই প্রশ্ন তোলেন এই আইনজীবী।

হাই কোর্টের শুনানিতে নিক্সনের জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌসি রূপা। তিনি বলেছিলেন, একজন সংসদ সদস্যের কাছে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি তিনি সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদও লঙ্ঘন করেছেন।

ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার চরভদ্রাসন থানায় সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়ে, গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলার উপ নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে ফোন করে কৈফিয়ত দাবি করেন সাংসদ নিক্সন। তার সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলে মহাসড়ক অবরোধ করার ‘হুমকি’ দেন এবং ‘অশোভন আচরণ’ করেন।

একইসাথে নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রের বুথের সামনে জাল ভোট দেওয়া ও ধূমপান করার সময় একজন পোলিং এজেন্টকে আটকের পর চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সাংসদ ‘অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

একজন সংসদ সদস্য হয়েও নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে নির্বাচনের প্রচারে অংশগ্রহণ করে এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ‘গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে’ নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ভোটের দিন সকালে সাংসদ নিক্সন চরভদ্রাসনের ইউএনওকে ফোন করে হুমকি-ধমকি দেন এবং অপর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার ওই টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।

পরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তার দাবি, হুমকি দেওয়ার যে অডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তা ‘সুপার এডিটেড’।

পুরনো খবর