নৌ শ্রমিকদের খাদ্যভাতার দাবি ন্যায্য: প্রতিমন্ত্রী

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তিন দিন ধরে ধর্মঘটে থাকা পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের খাদ্যভাতার দাবি ‘ন্যায্য’ এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তার সমাধান তিনি করতে চান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2020, 09:17 AM
Updated : 22 Oct 2020, 09:38 AM

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তর ধর্মঘটের বিষয়ে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আলোচনা চলমান আছে এবং আজকের মধ্যেই এর সমাধান হবে।”

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজের অফিসে ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধর্মঘট নিয়ে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “নৌ শ্রমিকদের মূল দাবি খোরাকি ভাতা; অবশ্যই তাদের এটা ন্যায্য দাবি। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ভাতাটা ন্যায্য।

“এর আগেও শ্রমিকরা ধর্মঘটে গিয়েছিল। আলোচনা করে সমাধান করেছি। শ্রমিকরা অসহায়। তারা শ্রম দিয়ে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে। মালিক-শ্রমিকদের সম্পর্ক থাকবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও হৃদ্যতাপূর্ণ। মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে এর সমাধান করব।”

বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে পাঁচ হাজার জাহাজ রয়েছে। আর এসব জাহাজে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করেন বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।

খাদ্য ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে সোমবার রাত ১২টা থেকে এসব পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা ধর্মঘটে যান। অন্যাদিকে মঙ্গলবার মালিকরা পাল্টা ছয় দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, ‘অযৌক্তিক’ দাবি মেনে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফাইল ছবি

দুই পক্ষ অনড় থাকায় বৃহস্পতিবারও সারাদেশে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাস।

তবে আপাতত খাদ্যভাতার বিষয়ে সমঝোতা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম।

এর প্রতিক্রিয়ায় নৌযান মালিকদের সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকরা যদি মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তাদের বসতে হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগরে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি মো. খুরশিদ আলম বলেন, “শ্রমিক নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকা কিছু কর্মচারীবৃন্দ দেশের চলমান অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য নেতিবাচক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।”

শ্রমিকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্কেলের বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, ধোলাই ভাতা ও উৎসব বোনাস, গ্রাচুইটি, ছুটির বেতন, রান্না করার জ্বালানি, মালিক কর্তৃক বাবুর্চি নিয়োগ, তেল সাবানসহ সকল সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।

“সে গেজেট ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর মাত্র কয়েকটা মাস, তারপর তো আলোচনা করতে পারেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের খাদ্যভাতাসহ অন্যান্য দাবি এই প্রেক্ষাপটে অসৌজন্যতার সামিল।”

তবে আলোচনার মাধ্যমে এই জটিলতা নিরসনের আশা প্রকাশ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার সবকিছু সমন্বয় করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সরকারের সময়ে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হচ্ছে। সরকারের সে সক্ষমতা আছে। সমন্বয় করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”

ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে ‘পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তাদের আলোচনায় পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর ও আশুগঞ্জ বন্দর সম্পর্কিত বিষয়গুলো এসেছে; এছাড়া সোনামুড়া নৌরুট এবং ইছামতী নদী খননের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে চাই। আরো শক্তিশালী করতে চাই এবং কাছাকাছি আসতে চাই।”

নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।