জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার তাগিদ

একটি শহরের বাসযোগ্যতার অন্যতম পরিমাপক সেই শহরের জনঘনত্ব। অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অধিক জনঘনত্বের কারণে ঢাকা এই সূচকে অনেক নিচে অবস্থান করছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2020, 05:15 PM
Updated : 21 Oct 2020, 05:15 PM

উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় জনসংখ্যা, জনঘনত্ব ও শহরের বিদ্যমান অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সাপেক্ষে শহরের ভার বহন ক্ষমতা বিবেচনা না করায় ঢাকার এই অবস্থা।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা শহরের জনঘনত্ব, বাসযোগ্যতা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিআইপি।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান তার প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনঘনত্বের একটি তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি বড় শহরের জনঘনত্বের মানদণ্ড প্রতি একরে ৭০-৮০ জন যা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় ১২০ হতে পারে। জাপানের টোকিওতে কেন্দ্রীয় এলাকার জনঘনত্ব একরপ্রতি ৯০ এর কম, অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে ৫৮ জন এবং সিঙ্গাপুরে ৮০ এর নিচে। তবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার লালবাগ-চকবাজারের জনঘনত্ব প্রতি একরে ৬০০ জন।

আদিল খান বলেন, এই এলাকার জনঘনত্ব পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি, কিন্তু অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা সব মানদণ্ড ও সূচকে অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। ঢাকাকে বসবাস অযোগ্যতার হাত থেকে বাঁচাতে এর জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

ঢাকাসহ সব শহর ও পৌরসভা পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে জনকাঠামো বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি।

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন রাজউকের প্রধান তিনটির কাজের মধ্যে একটি উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ। যেসব উপায়ে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয় তারমধ্যে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার)’ প্রয়োগ অন্যতম।

“কিন্তু ২০০৮ সালের ‘মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা’ তৈরির মাধ্যমে ঢাকা শহরের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। সারা শহরের জন্য একই ধরনের ফার-এর সুযোগ রাখা শহরের জনঘনত্বকে ব্যবস্থাপনার অযোগ্য করে তুলেছে। ঢাকার শহরের ভার বহন ক্ষমতাকে বিবেচনায় না নিয়ে সব এলাকায় অতি উঁচু মানের ফার প্রবর্তন করায় ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি মানুষ এই শহরে বাস করছে। এ কারণে নাগরিক সেবা বিভিন্ন অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।”

বিআইপির সাবেক সহসভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, মানদণ্ড এবং বাসযোগ্যতা বিবেচনা করেই বিভিন্ন শহর বা এলাকার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় সঠিক প্রয়োগের অভাবে সেই পরিকল্পনার মান ঠিক থাকে না।

তিনি বলেন, আগের পরিকল্পনা এবং আইন ও বিধিমালায় জনঘনত্ব বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় ঢাকা শহরের জনসংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গেছে।

“একইসাথে পরিবহন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত নগর ঊপহার দিতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও জনবসতিসমূহের পরিকল্পনায় বাসযোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ এবং জনঘনত্বের বিস্তারিত অনুশীলন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।”