এই সামাজিকীকরণই পুরুষকে ‘অপরাধী করে তুলছে’

সমাজে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তার কারণেই অনেক পুরুষ অপরাধী হয়ে বেড়ে উঠছে বলে মনে করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফারহানা হেলাল মেহতাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2020, 06:16 PM
Updated : 19 Oct 2020, 08:15 PM

নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ বিষয়ক অভিযোগ কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ফারহানা।

তিনি বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বহু দিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু এতে সহিংসতা কমেছে সেটি দেখা যায় না। আসলে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে, দেখার মাধ্যমে, শেখানোর মাধ্যমে একজন পুরুষ অপরাধী হয়ে বেড়ে উঠছে।

“এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে শিশুর দেখা ও শোনার জায়গা কলুষমুক্ত করতে হবে।”

সন্ধ্যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সহিংসতা দূর করতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই প্রতিরোধ করলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারপারসন জিনাত আমিন শিপা।

তিনি বলেন, “নারীর অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আইন থাকার পরও সহিংসতা বাড়ছে ঘটনার দ্রুত দৃশ্যমান বিচার না হওয়ায়। এজন্য পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।”

সাক্ষীর সুরক্ষায় আইনের দাবি জানিয়ে মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাডভোকেট মাকসুদা আক্তার লাইলী বলেন, “তরুণদের এক দল সহিংসতা প্রতিরোধে আন্দোলন করছে, আরেক দল সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে।

“অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্র কাঠামোয় বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করলে সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব। যদি তরুণরা বিচারের দাবিতে সমান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসে তবে এই অসমতা দূর হবে।”

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা রাখার তাগিদ দিয়ে মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, “কোভিড-১৯ এর অভিঘাতসমূহ যখন মানুষ মোকাবেলা করছে তখন নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি সকলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কেবল পারিবারিক সহিংসতাই নয়, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।”

এসব সহিংসতা প্রতিরোধে এর পেছনে থাকা সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাধা দূর করতে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

তিনি বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রচলিত যে আইনগুলো রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সামাজিক কাঠামোগত ধারণার পুনঃনির্মাণে কাজ করতে হবে।

“দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীকে বয়কট করতে হলে সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি করতে হবে, জেন্ডারবান্ধব সমাজ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে।”