২ লাখ ৮৭ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে

দেশের দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি জবর দখল করে খাচ্ছে ৯০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বেশি বনভূমি অবৈধ দখলে আছে কক্সবাজার জেলায়, ৫৯ হাজার ৪৭১ হাজার একর।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2020, 03:48 PM
Updated : 19 Oct 2020, 03:48 PM

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সোমবার এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে এ তথ্য দিয়েছে।

সংসদীয় কমিটি ওই ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর তা প্রকাশ করবে সংসদীয় কমিটি।

এছাড়া বেদখল হওয়া বনভূমির বর্তমান অবস্থা কী সে সম্পর্কেও বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দেখতে চাই কারা এসব বনভূমি দখল করে রেখেছে। এক চুল জমিও আমরা বেদখলে রাখতে চাই না।

“যারা দখল করে রেখেছে তাদের তালিকা আমরা চেয়েছি। সেটা আমরা জনসমক্ষে প্রকাশ করব।”

সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর।

সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৬০ হাজার ২৪০ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, সংসদীয় কমিটি জবরদখল হওয়া জমি উদ্ধারে বন বিভাগের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করবে।

“আমরা দেখতে চাই, দখলদারদের উচ্ছেদে কতবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আইনজীবী কারা আছেন। আইনি সংষ্কার যদি করা লাগে তাহলে সেগুলো কী? বনবিভাগ, মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় কমিটি এখন জরুরি ভিত্তিতে এই জমি উদ্ধারে কাজ করবে।”

বিপুল পরিমাণ বনভূমি জবরদখলের কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলেছে, সিএস রেকর্ড মূলে রেকর্ডভুক্ত বনভূমি পরবর্তীতে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। এছাড়া এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বনভূমি (সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়া অন্যান্য যেমন রক্ষিত, অর্পিত বনভূমি) জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দিয়েছে।

এছাড়া বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে এর দুই পাশে বনভূমি জবরদখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় জনগণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বনভূমি দখল করে কৃষি কাজ, স্থায়ী স্থাপনা, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল, প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অনেক জবরদখল করা বনভূমিতে শিল্প-কারখানাও স্থাপন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিল্পপতিও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বনভূমি জবরদখলের ক্ষেত্রে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে নিম্ন আদালতে মামলা ও আপিল এবং উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে এর মাধ্যমে স্থিতাবস্থা বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে থাকে।

এছাড়া উচ্ছেদের কাজে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অসহযোগিতা করে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বন বিভাগ।  

ইকো পার্কে ‘পিকনিক নয়’ 

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এত দিন বন্ধ থাকা বিভিন্ন ইকো পার্ক নভেম্বর মাসে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

তবে সংসদীয় কমিটি বলেছে, খুলে দেওয়া হলেও সেখানে যদি মাইক বাজিয়ে পিকনিক বা ধারণ ক্ষমতার বেশি জনসমাগম হয় সেক্ষত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে।

এ বিষয়ে সাবের চৌধুরী বলেন, “ইকো পার্ক থেকে আমাদের আয় ৯ কোটি টাকার মতো। কিন্তু জনসমাগমে ক্ষতি কত হচ্ছে সেটাও নিরূপণ করতে হবে। সেজন্য নতুন নীতিমালা করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। দেখতে হবে এই ৯ কোটি টাকা আসলে দরকার আছে কি না। পরিবেশগত এবং সেখানকার বাসিন্দা প্রাণিদের ক্ষতির দিকটাও মূল্যায়ন করতে হবে।”

বৈঠকে জানানো হয়, বন অধিদপ্তরের এবং বনভূমির নিরাপত্তায় সরাসরি জড়িত কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও কর্মে উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের ১১-২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ৩০% হিসেবে ঝুঁকি ভাতা প্রচলন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য এলাকা যেখানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় সে সব এলাকার কোনো কর্মচারী দায়িত্ব পালনরত থাকলে তাদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি ভাতা দেওয়া যায় কি না সে বিষয়টিও মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও শাহীন চাকলাদার উপস্থিত ছিলেন।