৪ শিক্ষককে নোটিশ: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো চার শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পেছনে উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের ‘প্রতিহিংসামূলক আচরণের’ ভূমিকা রয়েছে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

খুলনা প্রতিনিধিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2020, 02:53 PM
Updated : 19 Oct 2020, 05:27 PM

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই প্ল্যাটফর্ম সোমবার এক বিবৃতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এই আচরণকে ‘অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ, ন্যক্কারজক ও হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফার পাঠানো বিবৃতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে। এই শিক্ষকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, চারুকলার প্রভাষক দীপ্তি দত্ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী ও অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল লিবারেল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক দীনা এম সিদ্দিকীসহ ৬০ জন শিক্ষক রয়েছেন।

গত জানুয়ারির শুরুতে আবাসন সংকট নিরসন ও মানসম্পন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে করেন। শিক্ষার্থীদের ওই  আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে প্রায় নয় মাস পর গত ১৩ অক্টোবর চার শিক্ষককে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চার শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, প্রভাষক শাকিলা আলম, ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আয়েশা রহমান আশা।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসনের এই আচরণ অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ, ন্যক্কারজক ও হীনউদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা মুক্তচিন্তা, জ্ঞানচর্চা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের কণ্ঠরোধ এবং সুনির্দিষ্টভাবে নিজেদের কোনো দুর্নীতি গোপনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রকম বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েছেন বলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করছি এবং এই রকমের ন্যক্কারজনক ভূমিকার প্রতি তীব্র নিন্দা প্রকাশ পূর্বক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার ও উক্ত শিক্ষকদের আর কোনো হেনস্তা না করার আহ্বান জানাই।”

উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হয়েছিল ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। সে ঘটনার পর প্রায় তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকার পরেও এখন প্রায় নয় মাস পর ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হল।

“এ আন্দোলনে আরও অনেক শিক্ষক সমর্থন জানালেও সুনির্দিষ্টভাবে এই চারজনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্ববর্তী কোনো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলেই আমরা আশঙ্কা করছি।

“ওই ছাত্র আন্দোলনের কাছাকাছি সময়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে একজন নারী নিয়োগপ্রার্থীর সঙ্গে যৌন নিগ্রহমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছিল এবং আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ওই ইস্যুতেও এই চার শিক্ষক নৈতিকভাবে অভিযোগকারীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। কাজেই কারণ দর্শানোর নোটিশে সুনির্দিষ্ট করে উক্ত চারজনকে অভিযুক্ত করানোর প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ হিসেবেও ভাবার অবকাশ আছে বলে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”

তাদের এই অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।