টিভি সংবাদে ‘স্পন্সর’: নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত

টেলিভিশন শিরোনামসহ সংবাদের বিভিন্ন অংশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষকতায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একবছর আগে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, তা স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2020, 10:06 AM
Updated : 18 Oct 2020, 10:06 AM

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসি, চ্যানেল আই, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও দীপ্ত টেলিভিশনের লিভ-টু আপিলের (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি করে রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

ফাইল ছবি

আদালতে চ্যানেল আইয়ের পক্ষে এ এম আমিন উদ্দিন, দীপ্ত টেলিভিশনের পক্ষে মুরাদ রেজা এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন।

আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন পরে বলেন, “আমরা আদালতের কাছে বলেছি, টেলিভিশনগুলোর আয়ের উৎস তাদের বিজ্ঞাপন। এখন এটা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অনেক টিভি চ্যানেলই টিকে থাকতে পারবে না। এ আয়ের উপর নির্ভর করেই তারা টিকে থাকে।

“পরে ১৯৫২ সালের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত যে আইন আছে, আমরা আদালতের কাছে তা তুলে ধরেছি। আদালত এসব বিষয় বিবেচনা করে হাই কোর্টে রায় স্থগিত করেছেন।”

বিটিআরসির আইনজীবী রেজা-ই রাকিব বলেন, “২০১১ সালে জনস্বার্থে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট সব টিভি চ্যানেল এবং বিটিআরসির বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিল। পরবর্তীতে রুলের শুনানি শেষে গত বছর রুল যথাযথ ঘোষণা করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই আদেশটা কার্যকর করার জন্য আমাদের নোটিস দিয়েছিল। বলা হয়েছিল বিটিআরসি এবং চ্যানেলগুলো যদি আদেশ মান্য না করলে তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে।

“এর বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল দায়ের করেছিলাম। চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশ কোনো হস্তক্ষেপ না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছিল। আজ আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়ে বলেছেন লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।”

ফলে এখন থেকে টেলিভিশনগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর প্রচার করতে পারবে বলে জানান এই আইনজীবী।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সাবেক শিক্ষক এম এ মতিনের জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত রুল জারি করেছিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ওই রুলে বলা হয়েছিল, টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, একই সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলে এভাবে সংবাদ প্রচার কেন সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে না?

তথ্য সচিব, আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভি, বাংলাভিশন, চ্যানেল আই ও বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।

পরে দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলকে এই আবেদনে পক্ষভুক্ত করা হয়।

চূড়ান্ত শুনানির পর রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছর ৬ মে হাই কোর্ট রায় দেয়।

রায়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে শিরোনামসহ সংবাদের বিভিন্ন অংশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষকতা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিটিআরসিসহ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তা কার্যকর করতে বলা হয়।

পরে এর বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করে বিটিআরসিসহ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। তার মধ্যে চারটি লিভ-টু আপিলের শুনানি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দিল।