উপ নির্বাচন: ঢাকা-নওগাঁয় ‘ভোটার উপস্থিতি কম’

সাত মাস আগে ইসির ‘যথেষ্ট প্রস্তুতি’ থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাত মাসের ব্যবধানে আরও দুটি সংসদীয় আসনে উপ নির্বাচন হচ্ছে ইভিএমে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2020, 10:06 AM
Updated : 17 Oct 2020, 04:29 PM

ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ এবং রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনে শনিবার সকাল ৯টায় ভোট শুরু হয়েছে, একটানা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি করে ইভিএম এবং প্রতিটি কেন্দ্রে কারিগরি দল রাখা হয়েছে। কেন্দ্রে সবার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বার্তা নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে ব্যানারও রয়েছে।

ভোট শুরুর পর ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহতাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল নয়টায় ভোট শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। কোথাও থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি।”

ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে এসে ভোট দেওয়ার অনুরোধ রাখেন তিনি।

যাত্রাবাড়ীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভোট দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।

নেতাকর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে ভোট কক্ষে যান তিনি। তার সঙ্গে সাংবাদিকরা গেলে মনু নিজেই তাদের ভোট কক্ষে যেতে মানা করেন।

ভোট কক্ষে থেকে বেরিয়ে এসে আমুলিয়া মাদ্রাসার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মনিরুল।

সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ভোট অত্যন্ত সুষ্ঠু হচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও এটা আস্তে আস্তে বাড়বে। নজিরবিহীন নির্বাচন হবে। জনগণের রায়ে আমি নির্বাচিত হব।”

তার ভোটগ্রহণ হয়নি বলে খবর চাউর হওয়ার বিষয়ে মনিরুল নিজের আঙ্গুলে ভোটের পর দেওয়া চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, “এই যে দেখেন আমি ভোট দিয়েছি।”

বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার এজেন্টেদের বের করে দেওয়া হয়েছে ভোটকেন্দ্র থেকে।

এবিষয়ে মনিরুল বলেন, “সালাহউদ্দিন শুরু থেকে নালিশ দিয়ে যাচ্ছে, তার কোনো ব্যনার-ফেস্টুন নেই, নেই কোনো প্রচারণা, সে নালিশ পার্টির লোক শুধু নালিশ করেই যাচ্ছে।”

অন্যদিকে নওগাঁ-৬ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আত্রাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক খান বলেন, “এ আসনের প্রতিটি ভোটকক্ষে নির্বিঘ্নে ভোট চলছে। সকাল ৯টা থেকে ইভিএমে সুন্দরভাবে ভোট শুরু হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট চলছে। কোথাও কোনো ত্রুটি দেখা দেয়নি ইভিএমে।”

ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের দিন শনিবার যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের অপেক্ষা।

গত ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। যদিও মহামারীর মধ্যে ঢাকার বাইরে ব্যালট পেপারে উপ নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে কারণে এবার দুই উপ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটের হার কেমন হয় তা নিয়ে নজর থাকবে পর্যবেক্ষকদের। 

মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নেতিবাচক প্রভাবের কারণে উপস্থিতি কম হয়েছিল বলে ধারণা প্রধান নির্বাচন কমিশনা কে এম নুরুল হুদার। এবার পরিস্থিতি তেমন হবে না বলে তার প্রত্যাশা।

তবে দুই উপ নির্বাচনেই কম ভোটার উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।

বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-৫ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডেমরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, “এখন উপস্থিতি একটু বাড়ছে। সকাল থেকে বেলা ১টার পরেও কোথাও কমবেশি উপস্থিতি ছিল; বেশ কিছু কেন্দ্রে প্রায় ১৫-২০% ভোট পড়েছে। সার্বিক চিত্র এখন বলা মুশকিল। দিন শেষে সব কেন্দ্রের তথ্য পেলেই ভোটার উপস্থিতির হার নির্ধারণ করা হবে।”

নওগাঁ-৬ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানও একই ধরনের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোট চলছে। বেলা ১টা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে প্রায় ২০% ভোট পড়েছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও রয়েছে। দেখা যাক।”

দুই জায়গাতেই নির্বিঘ্নে ভোট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

দুপুরে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহতাব উদ্দিন বলেন, “সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছে। আমি বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে।”

এদিকে প্রার্থীদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আল আমিন।

“ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে অন্তত তিনটি কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো ও বের করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছিল। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট রয়েছে।”

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, উপ নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। কোথাও কোনো গোলযোগের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

বিকাল ৩টায় ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামানও বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে।

ঢাকা-৫

# ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয়।

# ভোটার: ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন

# ভোটকেন্দ্র ১৮৭, ভোটকক্ষ ৮৬৪টি

# প্রার্থী: আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আরিফুর রহমান এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের আনছার রহমান শিকদার

নওগাঁ-৬

# রাণীনগর উপজেলা ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হয়

# ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন

# ভোটকেন্দ্রে- ১০৪, ভোটকক্ষ ৭২১

# প্রার্থী:  আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিএনপির শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, এনপিপির মো. খন্দকার ইন্তেখাব আলম।