মশা নিয়ন্ত্রণে চতুর্থ প্রজন্মের ওষুধ ব্যবহার করছে ডিএনসিসি

মশা নিয়ন্ত্রণে চতুর্থ প্রজন্মের একটি ওষুধ ব্যবহার করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2020, 06:27 PM
Updated : 16 Oct 2020, 06:27 PM

‘নোভালিউরন’ নামের এই ওষুধ একবার ছিটালে তিন মাস পর্যন্ত সেখানে মশা জন্মাতে পারবে না বলে জানিয়েছে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

ডিএনসিসি বলছে, চতুর্থ প্রজন্মের ওই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। শনিবার থেকে ডিএনসিসি এলাকার ৬৬০টি স্থানে এই ওষুধ ছিটানো শুরু হবে।

যুক্তরাজ্যের একটি কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভালিউরন তৈরি করছে। এটি একটি ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর (আইজিআর), এটা মশার বৃদ্ধি আটকে দেবে, লার্ভাকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে দেবে না। ট্যাবলেট আকারের ওষুধ পানিতে ব্যবহার করতে হয়।

‘স্লো রিলিজ ফর্মুলেশনের’ এই ট্যাবলেট পানিতে রেখে দিলে ধীরে ধীরে মূল উপাদানটা পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মশার লার্ভার বৃদ্ধি আটকে ব্যাহত হয়। লার্ভা পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নিতে পারে না।

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারোয়ার জানিয়েছেন।

তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের তত্ত্বাবধানে তিন মাস ধরে নোভালিউরনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। একই সময়ে ডিএনসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও ওষুধটির প্রয়োগ হয়েছে।

“এই কীটনাশকের ফিল্ড ট্রায়াল কানাডা ও ইংল্যান্ডে হয়েছে। আমাদের মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটের বেইজমেন্টে নোভালিউরনের প্রয়োগ করেছি। সেখানে সব সময় পানি জমে থাকে। দেখেছি কোনো মশা জন্মাচ্ছে না।

“প্রস্তুতকারক ওষুধটি যেভাবে কাজ করবে বলেছিল, তা আমাদের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায়ও দেখেছি। আমরা ৩০ জুলাই সেখানে ওষুধ দিয়েছিলাম। গত বৃহস্পতিবার আমরা সেখানে গিয়েছি। দেখেছি লার্ভা নেই।”

মোস্তফা সারোয়ার জানান, প্রতিটি ট্যাবলেটের ওজন এক গ্রাম। ১০ লিটার পরিমাণ পানির মধ্যে দুটি ট্যাবলেট ছেড়ে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসি এলাকার বিভিন্ন জলাবদ্ধ ড্রেন, খাল ও লেকে এই ট্যাবলেট ছাড়া হবে।

“লেক ও খালের পানিতে ছিটালে পানিতে ভেসে যেতে পারে, নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এ কারণে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাপড়ে মুড়ে পানিতে রেখে দিব। এখান থেকে ওষুধ রিলিজ হয়ে যাবে। অল্প পরিমাণে পানিতে দেওয়ার জন্য আমরা আমদানিকারককে বলেছি দানাদার আকারে ওষুধটি করে দেওয়ার জন্য। সরিষার দানার মতো হলে অল্প পানিতে ছিটিয়ে দেওয়া যাবে।”

এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কীটতত্ত্ববিদরা ডিএনসিসির ৬৬০টি স্থানকে কিউলেক্স মশার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছে। এসব জায়গায় ওষুধটি দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, ডিএনসিসির খালগুলো পরিষ্কার করার অন্যতম কারণ নোভালিউরন ছিটানো।

“এখন আমরা যেটা করি সেটা মশার ওষুধ দিয়ে মারি। কিন্তু মশা জন্মাবে কেন? মশাটা যখন পিউপা আকারে থাকবে তখনই এটিকে বিকলাঙ্গ করে দেবে। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশে প্রথম চতুর্থ প্রজন্মের মশার কীটনাশক ব্যবহার করছি। আর এইডিস মশার জন্য আমরা একটা প্রটোকল তৈরি করছি। এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করব।”

মশার এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার।

তিনি বলেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে ওষুধটি তিন মাস ধরে কাজ করবে। গবেষণাগারে সেটাই পরীক্ষা করে দেখেছেন তারা।

“আমরা ল্যাবে দেখেছি যে, এটা কার্যকর থাকে কি না। আমাদের গবেষণাগারে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, এই ওষুধটা মশা মারতে কাজ করবে।”

তাহমিনা আক্তার বলেন, “এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ এটা ইনসেক্টকে মারবে না। এছাড়া এটা যে কীটের ওপর প্রয়োগ করা হয় শুধু সেটার ওপরই কাজ করবে।”

তিনি বলেন, “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় এটা অন্য কীটপতঙ্গ মারবে না। ফলে ইকোসিস্টেম নষ্ট করবে না।”

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শীতকালে কিউলেক্স মশার উৎপাত বাড়ে। এই মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া হতে পারে।

শীত বাড়লেই রাজধানীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজধানীর অনেক এলাকায় দিনের বেলাও এই মশার উপদ্রব থাকায় কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।