ইভিএমে দুই উপ নির্বাচন: নজরে থাকবে ভোটের হার

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাত মাসের ব্যবধানে আরও দুটি সংসদীয় আসনে উপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ইভিএমে, যেখানে ভোটের হার থাকবে আগ্রহের বিষয়।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2020, 06:27 PM
Updated : 17 Oct 2020, 04:30 PM

ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ এবং রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগা-৬ আসনে ভোট শুরু হবে শনিবার সকাল ৯টায়, একটানা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

ঢাকার ভোটে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ পাঁচ দল এবং নওগাঁয় তিন দলের প্রার্থী থাকলেও মহামারীর মধ্যে ভোটের সেই উত্তাপ বা ভোটারদের আগ্রহ- কোনোটাই সেভাবে নেই।

নির্বচন কমিশন বলছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে ভোট নেওয়া যায়, তার সব ব্যবস্থাই হয়েছে। শুক্রবারই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।    

প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি করে ইভিএম থাকছে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকছে কারিগরি দল। কেন্দ্রে সবার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী থাকবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বার্তা নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে ব্যানারও থাকবে।

ঢাকার উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাবউদ্দিন বলেন, “ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে কারো কাছ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে রয়েছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।”

আর নওগাঁর উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য অতিরিক্ত ইভিএমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনোভাবে কেনো কক্ষে ত্রুটি বা সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা রিপ্লেস করা বা ত্রুটিমুক্ত রাখার বিষয়ে প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।”

গত ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। যদিও মহামারীর মধ্যে ঢাকার বাইরে ব্যালট পেপারে উপ নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে কারণে এবার দুই উপ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটের হার কেমন হয় তা নিয়ে নজর থাকবে পর্যবেক্ষকদের। 

সাত মাস আগে ইসির ‘যথেষ্ট প্রস্তুতি’ থাকলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নেতিবাচক প্রভাবের কারণে উপস্থিতি কম হয়েছিল বলে ধারণা প্রধান নির্বাচন কমিশনা কে এম নুরুল হুদার। এবার পরিস্থিতি তেমন হবে না বলে তার প্রত্যাশা।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকলে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “মাঠে ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন যদি না হয়, তখন ভোটারদের অনীহা থাকে।”

ঢাকা-৫ উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহতাবউদ্দিনেরও বিশ্বাস, শনিবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ‘তুলনামূলকভাবে বাড়বে’।

ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উৎসবমুখ পরিবেশে ভোট দেবেন। নিরাপত্তা বলয় সাজিয়েছি। আইনানুগ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। কেন্দ্রে আসবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরে যাবেন।”

ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন (বাঁ থেকে) আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর।

নওগাঁ-৬ আসনের উপ নির্বাচনে (বাঁ থেকে) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মো. রেজাউল ইসলাম ও বিএনপির মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল।

ঢাকা-৫

# ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয়।

# ভোটার: ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন

# ভোটকেন্দ্র ১৮৭, ভোটকক্ষ ৮৬৪টি

# প্রার্থী: আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আরিফুর রহমান এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের আনছার রহমান শিকদার

নওগা-৬

# রাণীনগর উপজেলা ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হয়

# ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন

# ভোটকেন্দ্রে- ১০৪, ভোটকক্ষ ৭২১

# প্রার্থী:  আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিএনপির শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, এনপিপির মো. খন্দকার ইন্তেখাব আলম।

অভিযোগ ‘আমলে নেওয়া হবে’

ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, "আমি সব ভোটারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছি। আশা করি আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব।"

তবে বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদে ইতোমধ্যে ইসিতে গিয়ে তার প্রচারে বাধার অভিযোগ এবং ভোটের দিন দলীয় এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “প্রচার চালাতে গিয়ে বারবার হামলা, গাড়ি ভাংচুর, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলাসহ নানারকম বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।”

রিটার্নিং অফিসার সাহতাব উদ্দিন প্রার্থীদের সব ধরনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।

নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় শনিবার ভোট দিতে পারছেন না বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম সকালেই আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

দনিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢাকা-৫ আসনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা করা হবে।

যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ভোট ঘিরে যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচল করতে পারবে না।

এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিয়েছে ইসি।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ কড়াকড়ি শিথিল করা যাবে।

এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক, ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগের যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

জাতীয় মহাসড়কে চলাচলরত এবং বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত যানবাহনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা যাবে।

আরও পড়ুন