দুর্গা পূজায় ডিএমপির একগুচ্ছ নির্দেশনা

মহামারীর মধ্যে দুর্গা পূজায় স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2020, 08:18 PM
Updated : 15 Oct 2020, 08:18 PM

পাশাপাশি মিছিল ও শোভাযাত্রা না করার বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে ধর্মীয় অন্যান্য অনুষ্ঠান পালন করা যাবে বলে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার।

দুর্গা পূজা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদরদপ্তরে ঢাকা মহানগর এলাকার নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় একথা বলেন কমিশনার।

করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে।

সেই বিবেচনায় অনুষ্ঠানস্থলে মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার।স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে দর্শনার্থীদের পূজা মণ্ডপে প্রবেশের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।

আগামী ২২ অক্টোবর শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু হয়ে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমী এবং বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক আয়োজকদের প্রতি একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার। সেগুলো হল-

# পূজা মণ্ডপের প্রবেশপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেসিন, পানির ট্যাংক, সাবান এবং পৃথকভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, থার্মাল স্ক্যানার ও জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

# কোনো ক্রমেই মাস্ক ছাড়া কাউকে পূজা মণ্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

# পূজা মণ্ডপগুলোতে সামাজিক দূরত্ব কমপক্ষে ৩ ফুট কঠোরভাবে বজায় রাখতে প্রয়োজনে মণ্ডপের ভেতরে ‘ফ্লোর মার্কিং’ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

# পূজা মণ্ডপে পৃথক প্রবেশ ও বের হওয়ার গেইট, আর্চওয়ে, সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভিডিও রেকর্ডিং নিশ্চিত করাসহ মেটাল ডিটেকটর দিয়ে যথাযথভাবে দেহ তল্লাশির জন্য পর্যাপ্ত পুরুষ ও নারী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।

# পূজা মণ্ডপগুলোতে একমুখী চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

# করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের পূজা মণ্ডপে আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

# শারদীয় দুর্গা পূজা উদ্বোধন উপলক্ষে সীমিত লোক সমাগম করে অনুষ্ঠান করতে হবে।

# ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং অনলাইনে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দুর্গা পূজার অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

# পূজা শেষে লোক সমাগম করে কোনো সমাপনী অনুষ্ঠান করা যাবে না।

# পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত আলো ও জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সাথে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, ময়লার ঝুঁড়ি ও নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

# পূজা উপলক্ষে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, সার্কাস ইত্যাদি আয়োজন করা যাবে না এবং উচ্চ শব্দে বাজনা বাজানো নিরুৎসাহিত করাসহ পটকা ও আতশবাজি না ফুটানো নিশ্চিত করতে হবে।

# শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন পরিহার করতে হবে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করতে হবে।

# শুধু বিসর্জনকালীন প্রতিমা বহন করার জন্য একটি ট্রাকে ন্যূনতম সংখ্যক লোক থাকবে। এছাড়া অতিরিক্ত ট্রাক বা গাড়ি বা লোক থাকতে পারবে না।

# সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

# প্রতিমা নির্মাণ স্থান, পূজা মণ্ডপসহ সব স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, স্বেচ্ছাসেবকদের এসবি দিয়ে ভেটিং করানো ও তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো এবং তাদের আলাদা পোশাক, পরিচয়পত্র ও আর্মড ব্যান্ড দিতে হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে:

# দুর্গা পূজার প্রতিমা তৈরির সময়, পূজা চলাকালীন ও বিসর্জনের সময় মোবাইল পেট্রোলের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

# ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকাভিত্তিক পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবেন।

# পূজা মণ্ডপ ও আশপাশে পকেটমার, ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে পুলিশের টহল ডিউটি নিয়োজিত থাকবে।

# দুর্গা পূজার এই সময়টা সোশাল মিডিয়া মনিটর করা হবে।

# গুরুত্ব বিবেচনায় পূজা মণ্ডপগুলো ডগ স্কোয়াড ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিট দিয়ে সুইপিং করানো হবে।

পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা:

# চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রাস্তায় কোনো ধরনের মেলা বসতে দেওয়া হবে না।

# রমনা কালী মন্দিরের সামনের রাস্তায় মেট্রো রেলের কাজ চলমান থাকায় বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

# বিসর্জনের দিন যে সব রুট দিয়ে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হবে সে সব সড়কে রাস্তা/ফুটপাতে হকার বসতে, রাস্তায় কোনো প্রকার মালামাল লোড ও আনলোড করতে এবং কোনো যানবাহন পার্কিং করতে দেওয়া যাবে না।

সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, আনসারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ মিশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।