২২ জনের ওই দলটি ৫ অক্টোবর মানিকগঞ্জ থেকে বাসে যাত্রী তুলে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে রাতে নবীনগর থেকে মিরপুরের হোটেল ব্যবসায়ী লস্কার রবিউল ইসলামকে (৪১) গাড়িতে তোলেন। টাকা-পয়সা কেড়ে নিতে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল সাভারের বলিয়াপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন যমুনা ন্যাচারাল পার্কের ফটকের পাশে।
এই চক্রের হোতা মো. বছির মোল্লাসহ (৪২) নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- শেখ হাফিজ (৩৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আমির হোসেন (২৮), মো. আল আমিন (২৯), জুয়েল (৩২), মো. নাঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)।
এদের মধ্যে বছির, আল আমিন, জুয়েল, হাফিজ, নাঈম ও আনোয়ার ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর তিন আসামি তপন, নাজমুল ও আমির হোসেনকে বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজীব হাসানের কাছে বুধবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বছির। অপর পাঁচ আসামি বৃহস্পতিবার রাজীব হাসান এবং জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাইরুজ তাসনিম, মিশকাত শোকরানা, শাহজাদী তাহমিদা ও কামরুন নাহারের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে রবিউলকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রের সদস্যদের বেশিরভাগ পেশায় পরিবহন শ্রমিক। সাভারসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। ডাকাতির জন্য তারা একত্রিত হন। এরমধ্যে কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল রুটের ‘নিরালা’ পরিবহনের একটি বাস ভাড়া করেন তারা। প্রথম দিন মানিকগঞ্জ থেকে যাত্রী তুলে ঢাকা আসার পথে তাদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেন। দ্বিতীয় দিনও এভাবে ডাকাতির এক পর্যায়ে রবিউলকে বাসে তোলেন।
“তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করায় কয়েকজন মিলে তাকে বাসের মধ্যে ফেলে হাত-পা চেপে ধরে মাথায় ‘হুইল রেঞ্জ’ দিয়ে আঘাত করে। মারা যাওয়ার পর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের ফটকের পাশে লাশ ফেলে বছির ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে বাসায় ফোন করে সেখান থেকে লাশ নিয়ে যেতে বলেন।”
এই ঘটনার পর ওই রাতে সাভার থানার পাশে বাসটি দাঁড় করিয়ে রেখে তার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকেন ঘাতকরা। পরদিন বাসটি ফেরত দিয়ে যে যার মতো করে নিজের জায়গায় চলে যান।
এই চক্রকে কীভাবে ধরা হয়েছে সেই তথ্য দুপুরে ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআই প্রধান জানান, মিরপুরের ‘শাহ হোটেলের’ মালিক রবিউল গত ৫ অক্টোবর আশুলিয়ার জামগড়ায় তার দুই ভাগ্নের কাছে যান এবং সেখান থেকে আশুলিয়া ইপিজেড এলাকায় যান এক হোটেল মালিকের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে বাসে করে ঢাকা ফেরার পথে খুন হন রবিউল।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এই ডাকাত চক্র কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে ৪ অক্টোবর ৩০ হাজার টাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের ওই বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া নেয়।
“ওই সময় বাসটিতে ২২ জন ছিল। রবিউল ভেবেছিল এভাবে চিৎকার ও ধস্তাধস্তি করলে অন্য যাত্রীরা এগিয়ে আসবেন। কিন্তু বাসে থাকা সবাই যে ডাকাত তা রবিউল বুঝতে পারেনি।”
বনজ কুমার বলেন, এ চক্রটি রবিউলকে বাসে উঠানোর আগে এক নারী ও পুরুষকে উঠিয়ে তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পথে নামিয়ে দেয়।
“এভাবে বাস ভাড়া করে গত তিন মাস ধরে বাসে যাত্রী উঠিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পথে নামিয়ে দিত তারা।”
এই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
সিলেটের রায়হান হত্যাকাণ্ড তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে পিবিআই প্রধান বলেন, “ওই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত এসআই আকবরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্ত ও বিমানবন্দরে বলা হয়েছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি তদন্তের যে নির্দেশনা আদালত দিয়েছে, তা এখনও তাদের হাতে পৌঁছায়নি।