নুরদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি, ছাত্র অধিকার পরিষদে ভাঙন

ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে সংগঠনটির একাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2020, 10:04 AM
Updated : 15 Oct 2020, 10:50 AM

নতুন সংগঠকদের ভাষ্য, নুর-রাশেদদের ‘আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সহযোদ্ধাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অবমূল্যায়ন করা এবং সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর করা ধর্ষণের মামলাকে নোংরা রাজনীতিকিকরণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে কমিটিতে এই ‘সংস্কার’ করা হয়েছে।

সংগঠনের পুরনো নাম‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

তাতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন এপিএম সুহেলকে, যিনি এক সময় যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আর সদস্য সচিব হয়েছেন আগের কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাট।

১৪ জন যুগ্ম আহ্বায়ক, তিনজন সদস্য, একজন যুগ্ম সচিব এবং দুইজন উপদেষ্টা নিয়ে ২২ সদস্যের এই কমিটি ‘আংশিক’ বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’; যার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতিমুক্ত সামাজিক সংগঠন হিসেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করা৷

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের তৃতীয় বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে অনেকের ‘বিরোধিতার’ মধ্যেও সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করা হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাড়াহুড়ো করে রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে তিনটি অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা হয়।”

ইসমাইল বলেন, “ছাত্র অধিকার পরিষদের অঙ্গ সংগঠন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত অজানা আমাদের কাছে। এর ফলে সংগঠনের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়। এর বিরোধিতা করে সংগঠনের তৃণমূল থেকে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু নুরের একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং সেই সাথে চরম বিরোধ সৃষ্টি করে সংগঠনের অভ্যন্তরে।”

তিনি বলেন, সংগঠনের স্বার্থে এবং ‘তাদেরকে শোধরানোর’ সুযোগসহ নানা বিষয় চিন্তা করে তারা এতদিন ‘চু’প ছিলেন। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না।

“এমতাবস্থায় সকল কিছু বিবেচনা করে নুর-রাশেদদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আমাদের আগের নাম 'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ' এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে চলমান সকল অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে একটি বৈষম্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে এবং সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে আমাদের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলাম।”

নতুন কমিটির অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এ সংবাদ সম্মেলনে।

নতুন কমিটির এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, “যারা আজকে কমিটির ঘোষণা দিয়েছে, তারা ছাত্র অধিকার পরিষদের কেউ না।  তাদের মধ্যে অনেককেই দেখলাম, যারা ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সংগঠন নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে আছেন। এই কমিটির আহ্বায়ক, যার নাম দেখলাম সুহেল, তাকে সংগঠনবিরোধী কাজ করার দায়ে গত মে মাসে বহিষ্কার করা হয়েছে।

“এখন যে কেউ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী হিসেবে দাবি করতেই পারে। দাবি করলেই তা হয়ে যায় না। কোথা থেকে তারা এসেছে তা আমরা বিবেচনাও করছি না।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক ব্যবস্থায় ‘ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার থেকে এই ধরনের কার্যকলাপ করাচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন নুর।

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের যেসব মামলা করেছেন, তার সবগুলোতেই আসামি হিসেবে আছেন নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকর্মী।

এর মধ্যে ধর্ষণের একটি মামলার প্রধান আসামি হাসান আল মামুন ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন, ধর্ষণের অন্য মামলার প্রধান আসামি নাজমুল হাসান সোহাগ ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলা হওয়ার পর তাদের সংগঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

যুগ্ম আহ্বায়ক নূর ওই দুই মামলাতেই ৩ নম্বর আসামি। শুধু তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেছেন ওই শিক্ষার্থী।

ধর্ষণের মামলার দুই আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোহাগ ও মামুন পলাতক থাকলেও নুরকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে গত কয়েক দিন।