ধর্ষণ রোধে ‘ব্যাপক ব্যবস্থা’ নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2020, 09:19 AM
Updated : 15 Oct 2020, 11:01 AM

বৃহস্পতিবার কর্মকর্তাদের ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “সমাজের কতগুলো ব্যাধি আছে। যেমন ইদানিং ধর্ষণটা খুব বেশি, ব্যাপকভাবে হচ্ছে এবং প্রচারও হচ্ছে। আর এটা যতবেশি প্রচার হয় এর প্রাদুর্ভাবটা কিন্তু তত বেশি বাড়ে।

“ইতিমধ্যে আমরা একটা অধ্যাদেশ জারি করে দিয়েছি আইন সংশোধন করে। কাজেই এখানে এই ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।”

মানুষের মাঝে জনসচেতনতাও সৃষ্টি করা দরকার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুইদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ধর্ষকের ‘পাশবিকতা’ রুখতেই তার সরকার আইন সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যে ‘জরুরি’বিবেচনায় আইনটি সংশোধনের পর এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন সরকারপ্রধান।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে আইন সংশোধন করে ওই শাস্তি বাড়ানোর দাবি জানানো হচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি তাতে সই করেন।

সরকার করছে, সাজা বাড়ায় অপরাধীদের মনে ‘অন্তত ভয়’ কাজ করবে, তাতে ধর্ষণের মত অপরাধ কমে আসবে।

নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের গ্রাজুয়েশন আমরা পেয়েছি, কিন্তু এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২০৪১ এ আমাদের দেশ উন্নত হবে। আর আজকে যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আপনারাই থাকবেন আগামী দিনের কর্ণধার। আপনারাই দেশটাকে পরিচালনা করবেন, দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

“আমি বলব, ২০৪১ পর্যন্ত তো আমি বাঁচব না, কিন্তু ২০৪১ এর যারা সৈনিক, আপনারা হচ্ছেন এই নতুন প্রজন্ম, আপনারাই সৈনিক। আপনারাই এই দেশকে সেইভাবে গড়ে তুলবেন। যেন বাংলাদেশ আর কোনোদিন পিছিয়ে না যায়, সেইভাবে আপনারা চলবেন।”

২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০৭১ এ আমরা যে শতবর্ষ উদযাপন করব, সেটাও কিন্তু আপনারা সেই সময় করবেন বা এরপরে আপনাদের পরবর্তী প্রজন্ম আসবে তারা উদযাপন করবে। আমি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম।”

মানুষের জীবনে একটা দিকনির্দেশনা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে কোনো দেশ এগোতে পারে না। দিক হারা জাতি কখনও কোনো ঠিকানা খুঁজে পায় না। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সকল পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম, যেটা আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। যেন বাঙালি জাতি সারাজীবন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে।”

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলে আপনাদের সঙ্গে এই করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে আমি বের হতেই পারি না, সেখানেও আজকে আপনাদের সঙ্গে যে যুক্ত হতে পেরেছি, কথা বলতে সুযোগ পাচ্ছি। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলেই আমরা পেরেছি।”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকারে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

“করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখার সাথে সাথে একটা নির্দেশই আমি দিয়েছিলাম যে, আর কিছু না হোক আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতেই হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

“কাজেই মানুষের জীবনে খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসার সুব্যবস্থা…কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। গ্রামের মানুষ চিকিৎসা ঘরে বসে নিতে পারছে এবং সেখানে মেয়েরাই সব থেকে বেশি লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন সেবাটা মেয়েরা পাচ্ছে। আমরা সেবাটা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাচ্ছি এবং সেটা অব্যাহত রাখতে হবে, সুষ্ঠুভাবে থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।