বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এ মামলাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের সেই শিক্ষার্থী, যিনি এর আগে নূরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছিলেন।
এ আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা মামলার আরজিতে দুইজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বিচারক ওই শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নিয়ে আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শামীম আল মামুন।
ওই শিক্ষার্থীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে রোববার মধ্যরাতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের অভিযানের মধ্যে ফেইসবুক লাইভে এসে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় কথা বলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, যাকে গত কিছুদিন ধরে নিয়মিত ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে মামলার বাদীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নূর বলেন, “একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্রাহীন। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায়…।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা; কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে তিনি যদি তা প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা কোনো ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটবার উপক্রম হয়, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। |
এসব অভিযোগে গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় নূর ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী।
ওই দুটি মামলা করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। পরে শাহবাগ থানায় তিনি আরেকটি মামলা করেন ‘সাইবার বুলিংয়ের’ অভিযোগে।
লালবাগের মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুনকে, যিনি এতদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় মামলার প্রধান আসামি সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ।
নুরুল হক নূরসহ সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ও কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকেও সেসব মামলায় আসামি করা হয়।
১৭ দিনেও আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় গত ৮ অক্টোবর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন মামলার বাদী সেই শিক্ষার্থী। পুলিশ ‘প্রভাবিত’ কি না, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।
অনশন শুরুর দুই দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফের সেই জায়গায় বসে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে গত রোববার রাতে রাজধানীর মগবাজার ও আজিমপুরে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ মামলার দুই এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুল ও নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান।
দুইজন গ্রেপ্তার হওয়ার রাতেই ফেইসবুক লাইভে এসে মামলার বাদীকে নিয়ে বক্তব্য দেন নুরুল হক নূর, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্য দেয়।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনরত সেই শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (নুরুল হক নূর) যা বলেছেন সব বানোয়াট, মনগড়া কথা। এরপরেও তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি ধরেও নেই আমি দুশ্চরিত্রা, তাহলে তার সহযোগী সোহাগ বা মামুন কী? তারা কি চরিত্রবান?
“ডাকসুর ভিপি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা ডাকসুর ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে। তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি কতটা জঘন্য চরিত্রের মানুষ। আমি তার এই বক্তব্যের বিচার চাই। আমি আর কত মামলা করব? প্রতিনিয়ত তারা আমার চরিত্র নিয়ে কটূক্তি ও অপপ্রচার করছে। আমি যথাপোযুক্ত বিচার চাই।”