মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, নদী ভাঙন, খরার মত দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আসতেই থাকবে এবং সেগুলো মোকাবেলা করেই বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে।
“সেটা মোকাবেলা করে বাঁচতে হলে আমাদের কি করণীয়- আমাদের সেই কথাটা চিন্তা করে সব সময় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। এবং আমরা কিন্তু সেটাই করে যাচ্ছি।
“আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে দেশে দুর্যোগ মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ১৯৯৬ সালে যতটুকু আমরা করে গিয়েছিলাম এর পরবর্তীতে আবারও একই অবস্থা হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে আমি পদক্ষেপ নিয়েছি। তার ফলে আজকে আমরা যে কোনো দুর্যোগ মোবেলায় সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করার আগে ভাবতে হবে, বাংলাদেশ ছোট একটি ভূ-খণ্ড, তাও আবার ব-দ্বীপ; তাতে বিশাল জনসংখ্যার বসবাস।
“এই ব-দ্বীপের ভেতরে প্রায় সাতশ নদী প্রবাহিত। খাল বিলের পানি সেখানে প্রতিনিয়ত যাচ্ছে।... এই জায়গায় দুর্যোগ মোকাবেলা করে মানুষকে রক্ষা করা, জান-মাল বাঁচানো, তাদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা- এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। আমরা এই ব্যাপরে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।”
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, “আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে যদি আমরা কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে এবং সবুজ বেষ্টনী করে দিতে পারি, তাহলে জলোচ্ছ্বাস থেকে কিন্তু আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। পাশপাশি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।
“সেই সাথে আমি সবাইকে আহ্বান করব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য এবং বাঁচার জন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা, সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।”
বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি থেকে মানুষকে যেন রক্ষা করা যায়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার এবং সরকারের নেওয়া ডেল্টা প্ল্যান এর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই যে সরকারের লক্ষ্য, সে কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা রাস্তা ঘাট যা কিছু তৈরি করি না কেন, সবাইকে আমি এটাই অনুরোধ করব যে আমাদের জলাধার, আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল এগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় সবার মধ্যে সচেতনা তৈরির ওপর জোর দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কীভাবে মানুষ নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে- এর ওপর আমাদের টেলিভিশন, রেডিও… বিশেষ করে রেডিওটা মানুষ বেশি শোনে। রেডিওর মাধ্যমে এটার একটা নিয়মিত প্রচার এবং কিছু কিছু প্রদর্শনী… এটা একান্ত দরকার।
“স্কুল থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষাটা দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই শিক্ষাটা দিতে হবে।এই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি এবং আমাদের নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন।