ঝুলন্ত তার কাটা না থামালে সেবা বন্ধ রাখার হুমকি

বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন থেকে ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ বন্ধ না করলে ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা সারাদেশে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2020, 08:50 AM
Updated : 12 Oct 2020, 12:37 PM

সোমবার দুপুরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, “বিকল্প ব্যবস্থা আমাদেরকে না করে দেওয়া পর্যন্ত অনুরোধ করব তার অপসারণের কাজটা থামিয়ে রাখার জন্য। অন্যথায় সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

“আগামী ১৭ অক্টোবরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না করা হলে আগামী ১৮ অক্টোবর রোববার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারাদেশে বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যাংকসহ সকল পর্যায়ে ইন্টারনেট ডেটা কানেক্টিভিটি ও কেবল টিভির সেবা প্রতীকীভাবে বন্ধ রাখা হবে, যতদিন না আমাদের এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে।”

আইএসপিএবির ৫ দফা দাবি হল: ১. স্থায়ী সমাধান না করা পর্যন্ত কোনো ঝুলন্ত তার অপসারণ করা যাবে না। ২. আইএসপিএবি, কোয়াব, বিটিআরসি, এনটিটিএন এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে লাস্ট মেইল কেবল স্থাপন করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিন তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাসা-বাড়ি, অফিস-ব্যাংকসহ সকল পর্যায়ের ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। ৪. গ্রাহক পর্যায়ে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি সেবা দিতে এনটিটিএন এর মূল্য সরকার থেকে নির্ধারণ করতে হবে। ৫. এনটিটিএনগুলোর (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) গ্রাম পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতের সার্বিক সক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) আওতাধীন অপারেটরদের ভূগর্ভস্থ লাইন দিয়ে ইন্টারনেট ও কেবল টিভির সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, টেলিফোন লাইন ও ডিশ লাইনের তার বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধেই বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঢাকার প্রায় সব রাস্তার পাশেই মাথার ওপর এখন তারের জঞ্জাল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা এসব তার ছিঁড়ে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে; কখনও কখনও অগ্নিকাণ্ডেরও কারণ ঘটায়। উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে ইন্টারনেট, টেলিফোন ও কেবল টিভির এসব তার অপসারণে আদালতের নির্দেশ থাকলেও মানছে না কোনো সেবা সংস্থা।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তারের এই জঞ্জাল অপসারণ শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। কিন্তু তার কাটার পর সংযোগ দিতে নতুন করে আবার তার টানছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে কয়েক ঘণ্টার ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। 

এই অভিযানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ১০ কোটি বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের আইএসপিএবির দাবি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আইএসপিএবি ও কোয়াবের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এম এ হাকিম বলেন, ১৯৯৬ সালে এ শিল্পের সূচনা হওয়ার পর থেকে গত ২৪ বছরে তিলে তিলে এর উন্নতি হয়েছে।

“আপনারা যদি খেয়াল করলে দেখেন, আমাদের যে লাইফস্টাইল, আমরা এখন টিভিতে লাইভ দেখছি, বিভিন্ন কনটেন্ট স্ট্রিমিং হচ্ছে, পড়াশোনা অনলাইনে হচ্ছে। করোনার মধ্যে অনলাইন স্ট্রিমিং হচ্ছে, বাজার-সদাই আমাদের মা-বোনেরা যারা কিনছেন, অনলাইনের মাধ্যমে কিনছেন। তার মানে আমাদের টোটাল জীবনধারা ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে।”

“অফিস-আদালতে যে ধরনের কার্য্ক্রমগুলো হচ্ছে, ভিডিও কনফারেন্স হচ্ছে এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন দেশ পরিচালনা করছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এই হাই র‌্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলো কোনোভাবেই ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে কিংবা তারবিহীন কিংবা ওয়ারলেন্স টেকনোলজির মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব নয়।”

ভালো মানের সেবা চাইলে তারের মাধ্যমেই ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে হবে মন্তব্য করে আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, “এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা আন্ডারগ্রাউন্ড থাকবে, না ওভারহেড থাকবে। এই শহর আমাদের, এই শহরের সৌন্দর্য আমরাও চাই। আমরাও চাই আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট বাসা-বাড়িতে পৌঁছে দিতে। কিন্তু নেটওয়ার্ক কিংবা আর্কিটেকচার আমাদেরকে সেই টেকনোলজির জন্য সাপোর্ট করে না।”

গত ২৪ বছরে দেশে যে কেবল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, রাতারাতি তা সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন এম এ হাকিম।  

“আপনারা যদি আজকে এই প্রেস ক্লাব থেকে আপনাদের অফিস পর্যন্ত যান, দেখবেন প্রতি এক কিলোমিটারে কয়টা করে ডিসট্রিভিশন পয়েন্ট আছে আন্ডার গ্রাউন্ড কেবলের জন্য। তার মানে আমরা ইচ্ছা করলেও আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে পারছি না।”

ঝুলন্ত তার অপসারণের এই সঙ্কট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, “ব্যাংকসহ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমাদের অবদান আছে, শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের অবদান আছে, লাইফস্টাইলে আমাদের অবদান আছে, সরকারের কাজের প্রতি আমাদের অবদান আছে।

“এত কিছুর পরে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করি যে, গত মার্চ মাস থেকে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন আমাদের কর্মীরা জীবনের মায়া উপেক্ষা করে প্রতিটা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সচল রাখতে সচেষ্ট হয়েছে। করোনার অবস্থার যখন উন্নতি হল, তথন কেবল কাটা শুরু করলেন সিটি করপোরেশন, যেটা আজকে পর্যন্ত চলমান আছে।”

এর ফলে ইন্টারনেট খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন জানিয়ে এম এ হাকিম বলেন, “আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই কেবল কাটাকাটি... দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনেও উনার যদি সেইম পন্থা অবলম্বন করেন, বাংলাদেশে আগামী তিন মাসের মধ্যে ৪/৫ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে।”

“আমরা আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন নগরের সৌন্দর্য বর্ধন করব। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এটা থামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

উত্তর সিটি করপোরেশন কেবলের রোড ক্রসিংয়ের ব্যাবস্থা করলেও দক্ষিণে তা নেই বলে জানান হাকিম।

আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক, সহসভাপতি রাশেদ আহমেদ, কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ, মহাসচিব নিজামউদ্দিন মাসুদ, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাইফুল হোসেন সোহেল, কামরুল আলম শামীম, মাকসুদ আহমেদ সুমন, ফিরোজ আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।