অবমাননা: তিন মাস সুপ্রিম কোর্টে নিষিদ্ধ ইউনুছ আলী আকন্দ

ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েও পার পেলেন না সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2020, 05:43 AM
Updated : 12 Oct 2020, 05:45 AM

গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আগামী তিন মাস তাকে সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা থেকে বিরত থাকার শাস্তি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সোমবার আপিল বিভাগের সাত বিচারকের সর্বসম্মত এই রায় ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “আদালত অবমাননার দায়ে ইউনুছ আলী আকন্দকে দোষী সাব্যস্ত করা হল। তাকে আজ থেকে আগামী তিন মাস সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে আইন পেশা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।”

পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ইউনুছ আলীকে। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বিচার বিভাগ নিয়ে ফেইসবুকে ইউনুছ আলী আকন্দের কিছু মন্তব্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে আপিল বেঞ্চের নজরে আনেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা (রোববার তিনি পদত্যাগ করেছেন)।  

সেসব মন্তব্যে ‘গুরুতর আদালত অবমাননা’ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার আরজি জানান।  

পরে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, মনসুরুল হক চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন (বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল), আইনজীবী মনজিল মোরেসদ ও সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের বক্তব্য শুনে আদালত সেদিন আদেশ দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে (আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগ) তার আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয় তখন।

সেই সঙ্গে ইউনুছ আলী আকন্দের ফেইসবুক পেইজ থেকে বিচার বিভাগ নিয়ে তার মন্তব্য অপসারণ করে তার অ্যাকাউন্ট ‘ব্লক করতে’ বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

এছাড়া প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে উপস্থিত হয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় এই আইনজীবীকে।

সে অনুযায়ী রোববার সকালে আপিল বিভাগের ১ নম্বর আদালত কক্ষে হাজির থেকে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে যুক্ত হন ইউনুছ আলী আকন্দ।

ভুল স্বীকার করে লিখিত এবং মৌখিকভাবে তিনি আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে তিনি আদালত অবমাননাকর কিছু করবেন না।

এরপর সোমবার প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে আদালতের রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে বিচার বিভাগ নিয়ে ফেইসবুকে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করায় গত মাসে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করেছিল সর্বোচ্চ আদালত।

দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর ‘অবমাননাকর কাজ’না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর আপিল বিভাগ মামুন মাহবুবকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।

তবে সেই আদেশে আদালত বলে দেয়, “ভবিষ্যতের জন্য এই মামলার কার্যক্রম ধারণ করা হয়েছে এবং তা সংরক্ষণ করা হবে।’

দেশে বিভিন্ন ঘটনার পর রিট মামলা করে আলোচিত ইউনুস আলী আকন্দ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করে হেরে যান।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে আবেদন করে তিনি নতুন আলোচনার জন্ম দেন।