তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস যদি আবার ব্যাপক হারে দেখা দেয়, তখন আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। মানুষকে আবার আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে। হয়ত আরো ডাক্তার, নার্স আমাদের লাগবে।
“সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। ঠিক যেটুকু আমাদের নেহায়েত প্রয়োজন, তার বেশি কোনো পয়সা এখন খরচা করা চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখেই সেই ব্যবস্থা নিতে হবে “
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ব্যাটালিয়নকে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
মহামারীর মধ্যেও ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই বাজেট দেওয়া কঠিন ছিল। তবুও আমরা দিয়েছি। তারপরও বলেছি যে অর্থ খরচের ব্যাপারে সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কমান্ডারদের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।
সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সেনা কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ ও মানুষের ভরসা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। কোনো সেনাবাহিনী মানুষের আস্থা, বিশ্বাস যদি অর্জন করতে না পারে, তাহলে কখনো তারা কোনো বিজয় অর্জন করতে পারে না। তাই আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
“আর বাংলাদেশের জনগণ- এরা তো আপনাদেরই আপনজন। আপনাদেরই পরিবারের সদস্য। কাজেই তাদের কল্যাণ্যের কথা চিন্তা করে আপনাদের কাজ করতে হবে।”
জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য ‘সম্মান ও গৌরবের বিষয়’ মন্তব্য করে পতাকা পাওয়া ইউনিটগুলোর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “আপনারা এই গৌরব অর্জন করেছেন। আমি আশা করি, জাতির আস্থা, বিশ্বাস অটুট থাকবে। দেশ সেবায় আপনারা আত্মনিয়োগ করবেন। দেশ মাতৃকার সেবা করাটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি গৌরবের। কাজেই আপনারা সেদিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করবেন।”
সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরে তাদেরকেও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “একটি কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। আমাদের সংবিধান, স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে জাতির পিতা সংবিধান আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার সব দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। কাজেই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতার দেওয়া পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। কাজেই আমরা কারো সাথে বৈরিতা চাই না। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি। বাংলাদেশ যেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে যে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) সুদূরপ্রসারী এ নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের কাজ চলছে।
“আমি মনে করি, আমাদের একটা কর্তব্য দেশকে উন্নত করা। যেহেতু আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক আমাদের সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বহিনী। তাদের সার্বিক উন্নয়ন- এটাও আমাদের দায়িত্ব। পাশপাশি বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তার মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বা আমোদের সেনাবাহিনী শুধু আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ না, আমরা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও অবদান রেখে যাচ্ছি।
“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের চলতে হয়, কাজ করতে হয়। তাই আমি সব সময় চেয়েছি আমাদের সেনাবাহিনী বা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সুপ্রশিক্ষিত একটি সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক, যেটা জাতির পিতা তার ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতিমালাতেও বলে গেছেন। সেইভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।”
সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘অভূতপূর্ব উন্নতি’ সরকার করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীতে গত সাড়ে ১১ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করায় সারা বিশ্বে আমাদের সামরিক বাহিনী একটি উন্নত ও আধুনিক বাহিনীর মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।”
বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সব সময় ‘নিবেদিতপ্রাণ’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাই জাতিসংঘ যখনেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চেয়েছে, পুলিশ বাহিনী চেয়েছে, আমরা সেটা দিয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র আমরা যেহেতু বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি এবং দেশের মধ্যে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক… আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যটা স্থির রেখে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।”