‘ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বাংলাদেশ’ ব্যানারে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশ থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে নয় দফা দাবি উত্থাপন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
তাদের দাবিগুলো হল-
# সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
# পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
# ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
# তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
# অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।
# ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
# পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।
# গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এ সময় প্রিন্স বলেন, “আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করব সারা দেশে। ধর্ষণকে উচ্ছেদ করে ছাড়ব এ দেশ থেকে।”
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ অভিমুখে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ করবেন।
এছাড়া ১১ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর সাংস্কৃতিক সমাবেশ, ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র উৎসব, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ ও ১৫ অক্টোবর সারা ঢাকায় ধর্ষণবিরোধী সাইকেল র্যালি করা হবে।
সমাবেশের সভাপতি অনিক রায় বলেন, “আইনমন্ত্রী বলেছেন, আইন সংস্কার করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির বিধান করা হবে। এজন্য আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কিন্তু কোনো আইন করে কি অপরাধকে দমন করা গেছে না যাবে?
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কথা বলেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তও।
তিনি বলেন, “আজকে রাষ্ট্র পদ্ধতির চূড়ান্ত পরিবর্তন না হলে এসব নারী ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধ হবে না। আমাদের ছেলেরা কেন ধর্ষক হবে? কেন নির্যাতিতা নারী বিচার পাবে না? প্রত্যেকটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া অবধি আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জলি তালুকদার বলেন, “আজকে পাহাড়ে-সমতলে সর্বত্র নারী ধর্ষণের যে নৃশংসতা শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আজকে ছাত্রলীগ যুবলীগের এসব অপকর্ম যদি চলতে থাকে তাহলে আপনি কোনোভাবেই আপনার গদি রক্ষা করতে পারবেন না।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “দেশের শাসক গোষ্ঠীই ধর্ষক উৎপাদন করছে। আজকে তারা ধর্ষকদের নিয়ে রাজনীতি করছে। আজকে তাদের নেতারা বলছেন, ধর্ষণের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সংযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, “এ সরকার এখন ধর্ষকদের পাহারাদার। আজকে এই ছাত্রলীগ কেন এত দুর্বিনীত, কেন ধর্ষণকামী হল তারা? কারণ খুবই তরুণ এসব ছেলেদের নানা অপকর্মে আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতারা নানা উৎসাহ দেন। আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, যারা সরকারি দলের সমর্থন করেন, যারা সরকারের চাটুকারিতা করেন, তারাও এ ছাত্রলীগ নেতাদের পেছনে পেছনে ঘোরেন।
“আজকে মন্ত্রিসভায় দেখুন, কারা মন্ত্রী বা মেয়র হয়েছেন? তারা তো ব্যবসায়ী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদদের জায়গা কোথায়? আমরা কি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি, কেন সরকার সব জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার ন্যায়বিচার পেতে গেলে।”
পূর্বঘোষিত এই মহাসমাবেশের শুরুতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন।