করোনাভাইরাস: শীতে ঝুঁকি কতটা?

আশ্বিন শেষ প্রায়, শীত শুরু হতে দেরি নেই বেশি। এই মহামারীকালে উত্তুরে হওয়া বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা আসতে শুরু করেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2020, 05:46 PM
Updated : 10 Oct 2020, 05:06 AM

বলা হচ্ছে, শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ নতুন করে বাড়তে পারে। আলোচনা হচ্ছে সংক্রমণের সম্ভাব্য ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ নিয়েও। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ঝুঁকি আসলে কতটা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সেপ্টেম্বরেই জানিয়েছিল, শীতের আগেই উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণ। শীতকালে মহামারী আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশেও যে শীত মৌসুমে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, সেই শঙ্কার কথা জানিয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সরকার প্রধানের নির্দেশনার পর রোডম্যাপ ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর অবশ্য বলছেন শীতের দেশে শীতের দিনে ঝুঁকি যতটা বাড়বে, উষ্ণমণ্ডলের দেশ বাংলাদেশে তেমন নাও হতে পারে।

শীতে যদি করোনাভাইরাস অনেক বেশি ভয়ঙ্কর নাও হয়ে ওঠে, তারপরও বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে শীত মৌসুমে ঝুঁকি বাড়ার বেশ কয়েকটি কারণের কথা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।  

তাদের ভাষ্যে, ঋতু পরিবর্তনের সময় পরিস্থিতি কতটা নাজুক হবে তা নির্ভর করছে মৌসুমী রোগ, মানুষের আচরণ এবং সরকারের ব্যবস্থাপনার ওপর।

তবে ভ্যাকসিন বা কার্যকর কোনো ওষুধ যেহেতু এখনও তৈরি হয়নি, গ্রীষ্মের মত শীতেও করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় ওই একটাই- কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

দেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষাগার বাড়লেও পরীক্ষা কমেছে

শীতের দেশ, গরমের দেশ

যুক্তরাজ্যের অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেস এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছিল, শীতের সময় দেশটির পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হলে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত সময়ে কোভিড হাসপাতালগুলোতে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

মহামারীর প্রথম ধাক্কায় যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। গত জুলাই থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসছিল, কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।

যুক্তরাজ্যের মত শীতপ্রধান অনেক দেশেই ঋতু পরিবর্তনের পর দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা।

তবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর মনে করেন, এক বছরের চক্র শেষ না হলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির ওপর শীত-গ্রীষ্মের প্রভাব নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

“এখন ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে হাইপোথিসিস দেয় যে, শীত আসলে করোনাভাইরাস বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে কিন্তু সিজনগুলো ভিন্ন। ওখানে শীত মানে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেল। বাংলাদেশে খুব শীতেও ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমরা এটাকে শীত বলি, কিন্তু এটা তো ওরকম শীত না। তাপমাত্রা নিয়ে এখন কিছু না বলাই আসলে বেটার।”

পাশের দেশ ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলের আবহাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে যায়। শীত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ভারতীয় গবেষকদের মধ্যেও।

আইআইটি-ভুবেনেশ্বর এবং এইমসের গবেষকরা গত জুলাইয়ে তাপমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে এক গবেষণায় জানিয়েছিলেন, বর্ষা এবং শীত মৌসুমে ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে।

সংক্রমণের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ইতোমধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৭ লাখ পেরিয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষের।

আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে সরকারিভাবে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারে।  

শীতে ঝুঁকি যেমনই হোক, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে বিকল্প নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আলমগীর বলেন, “তাপমাত্রা যত কমবে, এসব ভাইরাসের স্থায়ীত্বকাল তত বাড়ে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। শীত আসবে বলে রিল্যাক্স হয়ে যাওয়া বা অনেক ভয় পেয়ে যাওয়ার কিছু নেই। আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিনই ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে এই দিন মজুরদের।

ঝুঁকি বাড়ে কীভাবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলছেন, শীতের সময় মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

“শীতে যেহেতু দরজা-জানালা বন্ধ থাকে, বদ্ধ ঘরে করোনাভাইরাস আসলে বাড়ে। সেজন্য বলা হয়, আলো-বাতাস ঠিকমত চললে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম। কিন্তু বদ্ধ ঘরে এটা বাড়ে। এ কারণে একটা ভয় থেকেই যায়।”

আর বাংলাদেশের ঝুঁকি নিয়ে তার মন্তব্য: “চীনে এই সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত শীতে। শীতপ্রধান দেশে এর ভয়াবহতা বেশি দেখা গেছে। অনেক শীতপ্রধান দেশে এখন তা বাড়ছে। সব মিলিয়ে আসছে শীতে আবার এটা বাড়তে পারে।”

ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে এই মহামারীর শুরু থেকেই নিয়মিত হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। শীতের সময় ঠাণ্ডার কারণে যদি মানুষ হাত ধোয়ায় অবহেলা করে, অথবা শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মেনে না চলে তাতেও বিপদ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শীতের সময় মানুষ আরও ক্লোজ কনট্যাক্টে আসে। গ্রামে পালা-পার্বণ, সামাজিকতা এ সময়টাতে বেশি হয়। ফলে মানুষ কাছাকাছি আসে, কাজেই মানুষে মানুষে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকবে।”

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যেই এখন সব আসনে যাত্রী নিচ্ছে গণপরিবহন

শীতজনিত রোগ

বাংলাদেশে শীত থাকে তুলনামূলক কম সময়, কিন্তু তার মধ্যেই মানুষকে ভুগিয়ে যায় নানা রকম রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, কোল্ড ডায়রিয়া, আমাশয়, চোখের প্রদাহ ও চর্মরোগ শীতের দিনের সাধারণ ব্যাধি।

গত শীত মৌসুমে ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৬১ জনের।

মুশকিল হল, এর মধ্যে বেশ কিছু রোগের উপসর্গ করোনাভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়। আর করোনাভাইরাস ও ঠাণ্ডজনিত রোগ একসঙ্গে বাড়লে তা ভয়ের কারণ হবে বলে মনে করছেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।

“এমনিতেই শীতকালে সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু, নিউমোনিয়ার মত রোগগুলো বাড়ে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, একটা ভয় তো কাজ করছেই।”

অবহেলায় বিপদ

দেশে মহামারী শুরুর পর লকডাউনসহ যেসব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, তার বেশিরভাগই তুলে নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।     

কিন্তু সে বিষয়ে খুব একটা গা করছে না সাধারণ মানুষ। বাধ্যতামূলক হলেও মাস্ক পরছেন না সবাই। রাস্তায়, যানবাহনে, হাট-বাজারে জনসমাগম হচ্ছে আগের মতই; সামাজিক দূরত্ব রক্ষার কোনো বালাই থাকছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এই শৈথল্য শীতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর শীতের ঝুঁকি মোকাবেলায় যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট নন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মানুষকে সচেতন করা হয়নি, যারা মাস্ক পরে না- তাদের বাধ্য করতে হবে। দেশে কয়েক হাজার আইন আছে, কিন্তু কার্যকর হয় না।”

মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ‘বাধ্য করতে’ না পারলে শীতে ঝুঁকি বাড়বে, মন্তব্য করে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, “মানুষের অসচেতনতার কারণেই শীতকালে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। লকডাউন করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু মাস্ক কিছু লোক পরে, কিছু লোক পরে না।”

ছুটির দিনে পুরান ঢাকার মুঘল স্থাপনা ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়।

দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভিডিও বুলেটিন প্রচার বন্ধ করে দেওয়াও একটি ‘ভুল বার্তা’ দিয়েছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম।

“মানুষ এখন মনে করছে, করোনাভাইরাস মনে হয় দেশে নাই। সে কারণে মাস্ক না পরে অসেচতনভাবে চলছে। আমরা বহুবার বলেছি বুলেটিন বন্ধ না করতে, তারা কথা শোনে না।

বুধবারও পরীক্ষার তুলনায় দেশে শনাক্ত রোগীর হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ, যা আগের চেয়ে কম হলেও ‘যথেষ্ট কম নয়’ বলে মনে করছেন অধ্যাপক নজরুল।

নমুনা পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামলে ঝুঁকি কমবে, এজন্য তো অনেক কাজ করতে হবে। শীতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা নিয়ে শঙ্কিত।

“মানুষ যেহেতু এখন মাস্ক পরে না, তাদের মধ্যে শৈথিল্য এসে গেছে। শারীরিক দূরত্ব মানার পরোয়াই করে না। মানুষের মাঝে উদাসীন ভাব চলে এসেছে। তারা এখন আর ভয় করে না।

“ভয়ে বসে থাকলে তো তাদের হচ্ছে না, পেট চালাতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের তো চলা কঠিন। তারা কাজে নামতে বাধ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে ঝুঁকি রয়ে গেছে।”

এ বি এম আবদুল্লাহর পরামর্শ, “জনসাধারণের প্রধান দায়িত্ব হবে মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলা। এটা মানা সবচেয়ে জরুরি।

“সরকার তো প্রশাসনের যা দায়িত্ব, তাই করবে। হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা ঠিক রাখবে, ডাক্তার-নার্স রাখবে। যাতে ঢিলেঢালা না হয়, শৈথল্য না আসে। জনসাধারণ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেই প্রচারও চালাতে হবে।”

কোভিড হাসপাতালগুলোতে রোগী কমে যাওয়ার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কয়েকটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে।

তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার তাগিদ দিয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, “হাসপাতাল হয়ত বন্ধ করল, কিন্তু সংক্রমণ বাড়লে তো সমস্যা। এটা ঠিক রাখতে হবে।”

করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, কিন্তু কমেছে নমুনা পরীক্ষা। ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগে যেখানে পরীক্ষা করা হতে ১৫০ জনের, সেখানে দিনে নমুনা নেওয়া হচ্ছে ৫০ জনের । বৃহস্পতিবার অসুস্থতা নিয়ে অনেকেই যান সেখানে নমুনা পরীক্ষা করাতে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

প্রস্তুতি কতটা?

শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুর রহমান।

তিনি বলছেন, কয়েকটি কোভিড হাসপাতাল বন্ধ করলেও ঝুঁকি বিবেচনায় অন্য হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

“আমাদের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো খালিই রয়েছে। যেহেতু শীতে সংক্রমণ বাড়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে, সে কারণে আমরা এ মুহূর্তে সব বন্ধ করছি না। যদিও বন্ধ করার পরিস্থিতি হয়েছে। বসুন্ধরা ও মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে বাকিগুলো আছে। শীত দেখে হয়ত আমরা বন্ধ করব।”

শীতে সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেকেন্ড ওয়েভের চেয়ে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল শীতকালটা। নভেম্বর মাসের পর থেকেই তো শীত চলে আসে। শীতে ধরে নিচ্ছি এটা বাড়বে, যেহেতু শীতের সময় অনেক রোগ থাকে। ওই প্রস্তুতিটা আমরা সিরিয়াসলি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, “ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট যাদের আছে, তাদের এ রোগটা নন-কোভিড। কিন্তু এগুলো যদি আমরা প্রতিকার করতে পারি, তাহলে কোভিড মোকাবেলা করা কিছুটা হলেও সহজ হবে।”

এজন্য সরকার ‘রোডম্যাপ’ ধরে এগোচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, “শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ ও ভ্যাকসিনের শতভাগ প্রস্তুতি রেখেছি আমরা। এছাড়া কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরপর কী করব, তারপর কী করব- এভাবে ভেবে আমরা প্রস্তুতিটা নিয়ে রাখছি।”

তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের সচেতনতার ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন আবদুল মান্নান।

“টেস্টে আগ্রহ দেখাচ্ছে না জনসাধারণ। তবে আমরা চাইছি, এখন যে সংক্রমণ বা মৃত্যু হার, তাও যদি ধরে রাখা যায়, তাহলেও মনে করছি কিছুটা… এভাবে আমরা একটা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

“আমরা তো এটা বন্ধ করতে পারছি না। যুক্তরাষ্ট্রও তো পারছে না, তাদের প্রেসিডেন্টও বাঁচতে পারছে না। আমাদের যা আছে, তা ডেকোরেট করে আমরা কাজ করছি।”

আরও পড়ুন