ব্রয়লার ‍মুরগিতে ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা, পরীক্ষা করতে বললেন কৃষিমন্ত্রী

দাম কম হলেও অনেকে ভয়ে ব্রয়লার মুরগি খাচ্ছেন না জানিয়ে এই মুরগিতে ক্ষতিকারণ কোনো উপাদান রয়েছে কি না, তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2020, 11:56 AM
Updated : 8 Oct 2020, 11:56 AM

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সব মানুষকে পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়াকেই সরকার এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কোভিড-১৯ পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

তিনি বলেন, একটি সমস্যার কথা (সেমিনারে) আপনারা অনেকেই বলেছেন। সারা পৃথিবীতে প্রোটিনের জন্য ব্রয়লার মুরগি সব থেকে সাশ্রয়ী উৎস।

“আমাদের দেশে ব্রয়লার ‍মুরগির দাম এই মুহূর্তে ১২০-১২৫ টাকা কেজি। অনেকেই খায় না এবং মনে করে এতে দূষণীয় কিছু বা বিষাক্ত কিছু রয়েছে, এটা খাওয়া আমাদের জন্য সেইফ না।

“আপনারা যারা ‍পুষ্টির সঙ্গে রয়েছেন, ড. তাহমিদ (আইসিডিডিআর’বি নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক তাহমিদ আহমেদ), বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং আমাদের আইএফএমসি- তাদের আমি অনুরোধ করছি, আমি প্রস্তাব দিচ্ছি- আপনারা সারা দেশে র‌্যানডম স্যাম্পল নিয়ে ব্রয়লার মুরগি টেস্ট করেন, এটা আমাদের জন্য কতটা নিরাপদ, এটা টেস্ট করে আপনারা বলেন।

“যদি ডেটা দেন ৯০ বা ৯৫ ভাগ সেইফ... তারা যে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছে, তারপর একটা কথা সবার মনে বদ্ধমূল হয়ে আছে সেটি হল যে ট্যানারি বর্জ্য খাওয়ায়।”

বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাতে কি পরিমাণ খাবার লাগে আর ট্যানারি থেকে কতটুকু বর্জ্য পাওয়া যায় সেই প্রশ্নও তোলেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “আচ্ছা সাভার ট্যানারিতে কত টন বর্জ্য হয়? আর বাংলাদেশে পোল্ট্রির জন্য ফিড কর্মাশিয়ালি কতটা উৎপাদন হয়?

“আমরা ৫০ লাখ টান বা তারও বেশি ভুটা করি, আরও ১০ লাখ টন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গরুকে এখন মোটা চাল খাওয়ায়। আপনারা বিশ্বাস করবেন না, আমরা ভিজিএফ দিই, সেই ভিজিএফ নিয়ে অনেকেই বিক্রি করে দেয়। কারণ এখন কেউ মোটা চাল খেতে চায় না।”

ব্রয়লার মুরগিতে ক্ষতিকারক কোনো উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পক্ষে মত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীতে সব মানুষই ব্রয়লার মুরগি খায়। তাই এই মুরগি মানুষের কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।”

রাজ্জাক বলেন, এই মুহূর্তে সরকার ও সকলের জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ হল পুষ্টিতে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করা, পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করা।

“খাদ্যের প্রাপ্তি- সেটা আছে, পর্যান্ত খাবার বাজারে আছে, কারো আয় থাকলে না খেয়ে থাকে না। যারা গবীর ও কম আয়ের মানুষ, তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে, সেসবের মাধ্যমে আমরা খাদ্য দিচ্ছি।”

চাল, গম, ভুট্টাসহ দেশে বছরে দানাজাতীয় চার কোটি ৩২ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এসবের সঙ্গে দুধ, ডিম, মাছ খাওয়া বাড়াতে হবে। এখন সেসব খাবার মানুষ পাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন আসতে পারে।

“আমরা চাল দিচ্ছি যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। কিন্তু মূল যে পুষ্টিজাতীয় খাবার- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো তো অনেকে কিনে খেতে পারছেন না। যদিও এসব উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। …এখন মানুষের আয় বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি নিতে হবে।”

পুষ্টির অভাবে মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি ‘কমে যাচ্ছে’ মত দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মানুষকে পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া আজকে আমাদের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।”

সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের যে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে, তা অনেকের কাছেই উদ্বৃত্ত থাকছে বলে তথ্য দেন রাজ্জাক।

“কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেন, এত খাবার দিয়েছেন, বিশেষ করে ভিজিএফ, কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে খাদ্য সঙ্কট হবে, এর প্রেক্ষিতে মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সাহায্য হিসেবে দিয়েছি, অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক খাবার মানুষকে দিয়েছে। সাধারণ মানুষও, যাদের আয় খুব বেশি না, তারাও কিছু খাবার, আলু, ডাল কিনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

“ঈদের দুদিন আগে আমি গ্রামে কথা বলছিলাম, গ্রামের মানুষ আমার নির্বাচনী এলাকায় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, দেশে (এলাকায়) যাব কবে? আমার সাথে তারা কথা বলতে চান। নানান কথা বলার সময় একজন টেলিফোন নিয়ে আমাকে বলছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এত খাদ্যশস্য সাহায্য দেওয়ার দরকার নাই। সবাই খাবার নিয়ে মুগরিরে খাওয়াচ্ছে, গরুরে খাওয়াচ্ছে, তারপরে পুকুরে মাছেরে খাওয়াচ্ছে।

“কয়েকদিন আগেও একজন পাবনা থেকে বলেছে, অনেকের ঘরেই খাবার পচে যাচ্ছে। এত বেশি চাল তাদের ঘরে রয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে চালের দাম বেশি, সেটি অন্য প্রসঙ্গ।”

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান, আইসিডিডিআর’বি নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক তাহমিদ আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির বিশেষজ্ঞ দলের উপদেষ্টা হামিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক কাজী আবুল কালাম এবং সেমিনারের সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠান ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন সেমিনারে বক্তব্য দেন।