গত মঙ্গলবারের ঘোষিত রায়ে তিন আসামির সাজা কমিয়ে শুধু আমৃত্যু কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনে তাতে অর্থদণ্ড যুক্ত করে বৃহস্পতিবার আবার আদেশ দিল বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ।
এ সময় আসামি পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
সকালে আদালত শুরু হওয়ার পর বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, “সেদিন রায়ে জরিমানার কথা বলা হয় নাই। ফলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপ করে রায়টি আবার সংশোধন করতে চাচ্ছি।”
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, জরিমানার টাকা না দিলে আসামিদের প্রত্যেককে অতিরিক্তি এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ আসামিদের আপিল খারিজ করে এক রায়ে বলেছিল যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর নয়, আমৃত্যু কারাবাস। আসামিদের স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাভোগ করতে হবে।
গোপাল কৃষ্ণ মুহরী হত্যা মামলাতেও সর্বোচ্চ আদালত আসামিদের আপিল খারিজের পাশাপাশি সাজা সংশোধন করে গত বৃহস্পতিবার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত, অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
এই তিন আসামি হলেন- তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, মোহাম্মদ আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর। তিনজনই জামায়াত-শিবিরের কর্মী।
২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর (৬০) বাসায় ঢুকে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী রেলওয়ের তৎকালীন অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী সেদিনই চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার বিচার শেষে নাসির ওরফে গিট্টু নাসির, আজম, আলমগীর ও মন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জজ আদালত।
এছাড়া মহিউদ্দিন ওরফে মহিনউদ্দিন, হাবিব খান, সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুল ও শাহাজাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ের পর মামলার ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে, পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরাও আপিল করেন।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া গিট্টু নাসির ২০০৫ সালের ২ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মারা যান যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছোট সাইফুলও।
হাই কোর্ট শুনানি শেষে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই রায় দেয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন সাজার আসামি শাহাজাহান ও সাইফুল ওরফে ছোটো সাইফুল খালাস পান, অন্যদের সাজা বহাল থাকে।
এরপর মৃত্যদণ্ডের তিন আসামির মধ্যে আলমগীর কবির খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেন। আর তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, মোহাম্মদ আজম করেন জেল আপিল।
এসব আপিলের শুনানি করে সর্বোচ্চ আদালত উচ্চ আদালতের রায় সংশোধন করে রায় দিল।