নারী নির্যাতনের উপযুক্ত বিচার আমরাও চাই: প্রধান বিচারপতি

দেশে নারী নির্যাতনের বিচার বিচার বিভাগেরও চাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2020, 07:10 PM
Updated : 8 Oct 2020, 12:16 PM

দেশে সাম্প্রতি কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের স্মরণসভায় বক্তব্যে এমন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান বিচারপতি বলেন, “এখন সারাদেশে নারীদের উপর এত নির্যাতন যে সরকার পর্যন্ত বিব্রত। সরকারের মন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন, আমরা ক্ষমতায়, আমরা এটার দায় এড়াতে পারি না।

“আমরা জুডিশিয়ারিতে আছি, আমরাও চাই উপযুক্ত বিচার হোক।”

আপিল বিভাগের কোনো রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আসামির সাজা কমলে যেমন গণমাধ্যমে আসে, তেমনি কোনো রায়ে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকলে তা না আসা নিয়ে সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, “জেল আপিল করতে গিয়ে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামিকে আমরা ছেড়েছি (খালাস হয়েছে বা দণ্ড কমেছে)। কারণ আমরা সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছি যে, আমরা ন্যায়বিচার করব। সেটা শপথের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিচার করেছি, ছেড়েছি।

“আপনারাও (সাংবাদিকরা) এটি নিয়ে বড় বড় প্রতিবেদন করেছেন। বিশাল বিশাল প্রতিবেদন করেছেন। কিন্তু আমরা গত কয়েক দিনে একটাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছি। এটার উপর সংবাদ করেননি। আজকে এক মামলায় তিনজনের ডেথ নিশ্চিত করেছি। এটা নিয়ে কোনো সংবাদপত্রে কোনো নিউজ নাই।”

তিনি বলেন, “উপযুক্ত বিচার যেখানে হচ্ছে, যেখানে ছাড়া হচ্ছে সেটা যেরকম বলবেন, মৃত্যুদণ্ড যেখানে বহাল রাখা হচ্ছে, সেটাও যদি জনগণের সামনে আসে, তখন জনগণের স্বস্তি হবে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সংগঠন ল’রিপোর্টার্স ফোরাম।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এনেক্স ভবন মিলনায়তনে বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের শোক সভা আয়োজন করে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম। সভায় প্রয়াতের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

মাহবুবে আলমের উদ্যোগ-ভূমিকা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “তার একটা সবচেয়ে বড় কথা ছিল, বিচার অঙ্গনে যত অনিয়ম আছে, এগুলো দূর করতে হবে।

“তিনি আমাকে বলেছেন, সেন্ট্রাল ফাইলিং করেন, এটা যদি করেন তাহলে কোর্টের ৫০ শতাংশ অনিয়ম দুর হয়ে যাবে।

“আমি বারের (সুপ্রিম কোর্ট বার) নেতৃবৃন্দকে বলেছি, আপনারা যদি সেন্ট্রাল ফাইলিংয়ে আসেন, তাহলে বারের যে অনিয়ম আছে তার ৫০ শতাংশ চলে যাবে। কিন্তু বার থেকে বলল সেন্ট্রাল ফাইলিং হবে না। আমরা (বার) আমাদের চয়েস অনুযায়ী কোর্ট নির্বাচন করব। আমি আশা করব, বার (সুপ্রিম কোর্ট বার) মাহবুবে আলমের ইচ্ছাটা অচিরেই বাস্তবায়ন করবেন।”

মাহবুবে আলমকে স্মরণ করে সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “মাহবুবে আলমের প্রতি আইন অঙ্গনের কিছু বিশেষ ঋণ আছে। বিচার বিভাগের বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বজায় রাখার ব্যাপারে তিনি কখনও আপস করেননি।

“সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তার আদর্শ অনুসরণ করতে পারলে এই ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ হবে।”

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, “তিনি পরিবারকে ভালবাসতেন। তার সন্তানদ্বয় আছেন, তাদেরকে বলি, আমার তার সাথে যে শেষ আলাপগুলো, তার সন্তানদের ঘিরে।

“তিনি আমাকে বলেছেন যে, ‘আমার ছেলেটা, আপনার …ইমরোজ খালিদীর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী) বিডিনিউজ ডটকমে চাকরি করত। তো দেখেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সরকার মামলা করেছে। আমি তো তাকে ওখানে চাকরি করতে দিতে পারি না। সো হি হ্যাজ রিজাইনড অ্যান্ড কাম ব্যাক’।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এনেক্স ভবন মিলনায়তনে বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের শোক সভা আয়োজন করে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম। সভা শুরু হয় প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হকের সভাপতিত্বে স্মরণ অনুষ্ঠানে মাহবুবে আলমের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাগত জীবন-কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সভায় বক্তব্য রাখেন।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে এম সাইফুদ্দিন ও মাহবুবে আলমের ছেলে সুমন মাহবুব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি আশুতোষ সরকার, সহ সভাপতি শামীমা আক্তারও সভায় বক্তব্য রাখেন।