এবার ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হলেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2020, 11:25 AM
Updated : 7 Oct 2020, 11:25 AM

তবে মহামারীর মধ্যে সেই পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হবে কি না, সেই সংশয়ের কথাও জানিয়ে রেখেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলছেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ফল ঘোষণা করা হবে, যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করছি সমন্বিত পদ্ধতিতেই আমরা সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারব।”

সেই পরীক্ষাগুলো কীভাবে হবে, গুচ্ছ পদ্ধতি কেমন হবে, তখনকার কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কারণ এখনও তিন মাস বাকি আছে। তিন মাস পরে সেই মূল্যায়নের জন্য কী পরিস্থিতি হয় তার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৪৪০ জনের। সর্বশেষ এক দিনেও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনাক্ত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি রোগী।

এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ পরীক্ষার মূল্যায়ন তৈরিতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও মতামত দেবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমিটির পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ তারা পাবেন বলে আশা করছেন।

“বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পরীক্ষায় গিয়ে মেধা পুরোপুরি যাচাই হবে সে কথা যদি এখন আমি বলি, আমি কি এখন নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও সশরীরে দেওয়ার মত পরিস্থিতি হবে?

“আমরা আশা করছি পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলো কী পদ্ধতিতে নেওয়া হবে সেটি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।”

এ মুহূর্তে সেসব বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে যাওয়া ‘সমীচীন হবে না’ বলেও মত দেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান উচ্চ মাধ্যমিক পার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।

একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।

শিক্ষার্থীদের এ দুর্ভোগ ও অভিভাবকদের ব্যয় লাঘবের জন্য গত কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তিতে তা সম্ভব না হওয়ায় গতবছর ইউজিসি কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ- এই চারটি গুচ্ছের আওতায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার কারণে সে উদ্যোগেও গতবার পুরোপুরি সফল হতে পারেনি ইউজিসি।