বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়লেও শাহবাজপুরে গ্যাজপ্রম কেন, বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ার পরও ভোলার শাহবাজপুরে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন একটি আলোচনা সভার বক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2020, 03:54 PM
Updated : 3 Oct 2020, 03:54 PM

তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, বাপেক্সের বর্তমান কর্মকাণ্ড সন্তোষজন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির পূর্বের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে।

শনিবার জ্বালানি বিষয়ক সাময়িকী ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় ভোলায় বাপেক্সের আবিষ্কার করা গ্যাসক্ষেত্রটির পরিচালনার দায়িত্ব বাপেক্সের হাতেই রাখতে প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

সাংবাদিক মোল্লা আমজাদের সঞ্চালনায় বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আব্দুস সালেক (সালেক সুফী), বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুর্তুজা আহমেদ ফারুক, মোক্তাদির আলী, বর্তমান এমডি মোহাম্মদ আলী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

ভোলার শাহবাজপুরে বাপেক্স অনুসন্ধান চালিয়ে যে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে, তার দুটি অনুসন্ধান কূপ ও একটি উন্নয়ন কূপের দায়িত্ব রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, “বাপেক্স অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করছে। এগুলো দূর করা না গেলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা হবে। বাপেক্সের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। ভোলার শাহবাজপুরে তাদের আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ডের অন্যদের দিলে হতাশা কাজ করবেই। এখনও সময় আছে। সরকার চাইলে এই গ্যাসক্ষেত্র বাপেক্সের হাতে রাখতে পারে। বাপেক্স এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তলনে সম্পূর্ণ সক্ষম।”

বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, “আগামী ১০ বছরে কী কাজ করা যায় সেগুলো নিয়ে কথা হওয়া উচিত। আগে আমাদের পলিসি ঠিক করতে হবে। বাপেক্সকে আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে রূপ দিতে হলে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে কাদের নিয়োগ দিতে হবে তা এখনই ঠিক করতে হবে।”

১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তাদির আলী বলেন, “বাপেক্সের নতুন পুরোনো নিয়ে ছয়টি রিগ আছে কিন্তু রাখার জায়গা নেই। রক্ষণাবেক্ষণের বাজেট ছিল না বলে আমাদের হেভি ট্রাকগুলো আস্তে আস্তে মাটির নিচে চলে যায়। টায়ার নষ্ট হলে তা পরিবর্তন করতে পারিনি। ব্যাটারি চলে গেলে ব্যাটরি লাগাতে পারিনি।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চারটি রিগ কেনার অর্থ দিয়েছেন গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে। ভোলার শাহবাজপুরে বাপেক্স যে গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার করেছে তাতে কূপ খনন করার জন্য কোনো বিদেশি কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল না। সরকার বাপেক্সকে রিগ দিয়েছে, অর্থ দিচ্ছে। কিন্তু বাপেক্সকে সাবলম্বী করার জন্য কেন তাদেরকে ড্রিলিং করতে দেওয়া হবে না? শুধু ওয়ার্কওভারের মধ্যে যদি বাপেক্সকে সীমাবদ্ধ রাখা হয় তাহলে তারা কখনও অর্থনীতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে না। জ্বালানি নিরাপত্তায় তারা কোনো অবদান রাখতে পারবে না,” বলেন সাবেক এই এমডি।

বাপেক্স বর্তমান এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, বাপেক্সের চারটি রিগই এখন চলমান আছে। দুজন কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছি। একজন জিওলজিস্ট এবং একজন জিওফিজিক্যাল কনসালটেন্ট।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী বলেন, পেট্রোবাংলা বাপেক্সকে কখনও সহজভাবে নেয়নি। যার কারণে শুরু থেকে বাপেক্সকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগাতে হচ্ছে। শুরু থেকেই অনুসন্ধান ও কূপ খননের বড় বড় কাজগুলো বাপেক্সকে না দিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হচ্ছিল। এই সরকারের আমলে পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা না দিয়ে বাপেক্সকে ১০৮টি কূপ খনন করার কাজ দেওয়া হয়েছিল যা পরে আলোর মুখ দেখেনি।

বর্তমানে বাপেক্স ভূমিতে যে কোনো ধরনের কূপ উন্নয়নে সক্ষম দাবি করে সুফী বলেন, “ভোলার শাহবাজপুর আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বাপেক্সের কোনো সমস্যা হয়নি। এই কূপ উন্নয়নের জন্য বাপেক্সের কোনো বিদেশি সহায়তার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।

“এখন বাপেক্স বোর্ডে যারা আছেন পলিসি গাইডলাইন কিংবা প্রশাসনিক গাইডলাইন দিয়ে একটি গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি পরিচালনা করার মতো কোনো যোগ্যতায় তাদের নেই। এই বোর্ডকে সংস্কার করা প্রয়োজন। বেতন কাঠামো সংস্কার করে এটাকে আন্তর্জাতিক মানের করেন,” বলেন সালেক সুফী।